রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতিই গিলেছে চাষির স্বপ্ন

দুর্নীতিই গিলেছে চাষির স্বপ্ন

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের বাঁধ ভেঙে ডুবে যাচ্ছে হাজারো হেক্টর বোরো ফসল। অকালে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। কয়েকদিন আগে তাহিরপুর উপজেলার নজরখালি বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এরপরই দিরাই,শাল্লা, ধর্মপাশা উপজেলার কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল নষ্ট হয়। পাহাড়ি ঢলের চাপে দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের আরো হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যায়।

গত কয়েকদিনে পাহাড়ি ঢলে জেলার সুরমা, যাদুকাটা, পাটলাই নদীতে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সীমান্তের নদ নদীর পানি ও বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হাওরের ফসল আবার ও ঝুকিঁর মধ্যে পড়েছে। গত রবিবার ভোর রাত থেকেই তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের বর্ধিত গুরমার হাওরের বাঁধ উপচে পানি হাওরে ঢুকছে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগা পাশা ইউনিয়নের কাছির গাতি হাওরের বাঁধের উপর দিয়েই পানি প্রবেশ করার ফলে এলাকার জনপ্রতনিধি, প্রশাসন ও কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রক্ষা হয়েছে। খাই হাওর পাড়ের জালোবাড়ি বাঁধ ও হুমকির মুখে। এ বাঁধগুলো ভাঙলে ফসলের প্রচুর ক্ষতি হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ জগন্নাথপুর ছাতক শান্তিগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধ ভাঙেনি, ফসলও তলিয়ে যায়নি। প্রতিটি হাওরেই এডিসি ও ইউএনও, পাউবোর কর্মকর্তা ও হাওরপাড়ের চাষিরা বাঁধ রক্ষার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছেন। এমনকি নৌকার মধ্যেই রাত কাটাচ্ছেন। নিদের্শনা দেয়া হয়েছে ৮০ ভাগ ধান পাকা হলেই যেন কর্তন করা হয়। ইতোমধ্যেই অনেক জায়গাতেই ধান কাটার ধুম লেগেছে। দিন যতই যাচ্ছে ধান কাটা ও তত বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে আরও করা হবে।

আরও পড়ুনঃ  ‘অটো পাসে’ শেষ হচ্ছে চলতি শিক্ষাবর্ষ!

অকালে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন হাজারো কৃষক। ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণ হিসেবে কৃষক ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা বলছেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ যথাসময়ে শুরু হয়নি। এর আগে গণশুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠনের কথা থাকলেও অনেক হাওরের কৃষকদের দাবি গণশুনানি ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের হাওরে জমি থাকার নিয়ম থাকলেও মানা হয় নি। একই পরিবারের একাধিক কৃষক সদস্য হয়েছেন যা নিয়মের পরিপন্থী।

বাঁধের কাজ শুরু করা হলেও অনিয়ম দুর্নীতি শুরু হয়। মেয়াদ শেষের অনেক পরও অনেক হাওরের কাজ সম্পন্ন হয় নি। বাঁধে দুরমুস লাগানো হয় নি। কোনো হাওরে নামেমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। বাঁধের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে মাটি যার কারণে পানির সামান্য চাপেই ভেঙে যায় বাঁধ। বাঁধের কাজে অনিয়ম দুর্নীতির খেসারত দিচ্ছেন হাওরের কৃষকরা। একের পর এক হাওর ডুবছে। ভেঙে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। পানির নিচে তলিয়ে গেছে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসল। বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল হাজারো কৃষকের স্বপ্নের সমাধি হয়েছে চোখের সামনে। রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিয়েও রক্ষা করা যায় নি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন