করোনার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পণ্য রপ্তানি। গত কয়েক মাসে রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে রপ্তানি আয়। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসেও বজায় রয়েছে এর ধারাবাহিকতা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেড়গুনেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ১৮ ভাগের বেশি অর্জিত হয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত বছর মার্চে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়েছিল। গতকাল সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
ইপিবির পরিসংখ্যান বলছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক ও বিশেষত নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াপণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারার কারণেই সার্বিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার যা গত বছরের একই সময়ের রপ্তানি পরিমাণের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য রপ্তানি ছিল ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মার্চ মাস শেষে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রপ্তানি ৩২ দশমকি ০৭ শতাংশ বেড়েছে।
তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় প্রসঙ্গে উদ্যোক্তারা বলছেন, একদিকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার কারণে লকডাউন হচ্ছে, অন্যদিকে আমাদের পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপ আমেরিকায় মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এসব কারণেই পোশাকের অর্ডার বেড়েছে, রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। তৈরি পোশাক খাতে মার্চে সার্বিকভাবে ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কারণ গত বছর এ সময় কোভিডের কারণে রপ্তানি আয় অনেক কম ছিল। এ বছর মার্চ মাসে ৩ দশমকি ৯ বিলিয়নের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ৯ মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময় চামড়াজাত খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।
তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে। মার্চ শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। সব শেষ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি আছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছর পণ্য রপ্তানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
আনন্দবাজার/শহক