ঢাকা | মঙ্গলবার
১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফাইলচাপায় বন্দর উন্নয়ন

ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর
প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা। দ্বিপাক্ষিক স্থলবাণিজ্যের আকার প্রায় এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। ইতোমধ্যে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে ভুটান ও নেপালও বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছে। বহুপাক্ষিক স্থলবাণিজ্যের সুবিধা পেতে সরকার ১৮১টি শুল্ক স্টেশনের মধ্যে ২৪টিকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে ১২টি চালু রয়েছে। বাকি ১২টি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। আরো ১২টি নতুন স্থলবন্দর নির্মাণাধীন রয়েছে। দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থলবাণিজ্যের যেমন প্রসার ঘটছে, তেমনি গুরুত্বও বাড়ছে। দেশের স্থলবাণিজ্য নিয়ে দৈনিক আনন্দবাজারের বিশেষ আয়োজনে আজ ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর নিয়ে সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি রেজাউল হক ডালিমের পাঠানো প্রতিবেদন- ফাইলচাপায় বন্দর উন্নয়ন।

জমি অধিগ্রহণে আটকে আছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের উন্নয়নকাজ। প্রায় এক বছর জমি অধিগ্রহণের ফাইল জমা পড়ে আছে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে। সেই ফাইল সম্প্রতি গেছে পরিবেশ অধিদপ্তরে। পরিবেশের ছাড়পত্র পেলেই জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হবে। পরে শুরু হবে উন্নয়নকাজ। অন্যদিকে, স্থলবন্দর দিয়ে আজও ইমিগ্রেশন বা অভিবাসন সেবা চালু না হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রক্ষায় পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। অথচ এই সেবা চালু হলে মাত্র ২০ মিনিটেই যোগাযোগ সম্ভব হতো।

তাছাড়া স্থলবন্দরটিতে অভিবাসন সেবা না থাকায় পর্যটনের সম্ভাবনাও শূন্যে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় পর্যটকরা কোনোভাবেই ঢুকতে পারছেন না ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরসহ পার্শ্ববর্তী পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এসব দিক বিবেচনা করেই সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে অভিবাসন চালুর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যা আবার আটকে আছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তবে ভোলাগঞ্জে ইমিগ্রেশন পোস্ট দাবিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে।

মূলত, ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু হয় সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের। ২০১৯ সালে এসে এটি দেশের ২৪তম স্থলবন্দর হিসাবে গেজেটভুক্ত হয়। এর আগ পর্যন্ত শুল্ক স্টেশন হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এ বন্দর দিয়ে কয়লা, পাথর, চুনাপাথর, ক্লিংকার, সাতকড়া, শুঁটকি, টমেটো, আদা, পিঁয়াজ, পান, রো-হাইস্কিল, হ্যালমেট, বে-লিফ, আঙ্গুর, আম, কলা, আনারস, লিচু ও ভাঙাকাঁচ আমদানি করা হয়। আর রপ্তানি করা হয় সব ধরণের খাদ্যসামগ্রী, তুলা, প্লাস্টিকসামগ্রী, সিমেন্ট, মেলামাইন, ক্লোরিন গ্যাস, আসবাবপত্র, মাছ, খৈল, ডিউরেবল প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্য।

অবশ্য করোনাসহ নানা প্রতিবন্ধকায় মাঝে-মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় বন্দরের আদমানি-রপ্তানি। পাশাপাশি রয়েছে জনবল সঙ্কট। উন্নয়কাজ শেষে পুরোদমে চালু হলে এ স্থলবন্দর দিয়ে বেড়ে যাবে আমদানি-রপ্তানি। ফলে সিলেট অঞ্চল লাভবান হওয়ার পাশপাশি দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে এ স্থলবন্দর।

ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে চুনাপাথর ও পাথর আমদানিকারী ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বসেন ভারতের ভোলাগঞ্জ বাজারে। যা স্থলবন্দরের বাংলাদেশ অংশ থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে। ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের দুই দেশের ব্যবসায়ীরা দুই কিলোমিটার দূরত্বে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানিকারকরা ব্যবহার করছেন সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন পোস্ট। যার ফলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের পাড়ি দিতে হয় ১৬০ কিলোমিটার পথ।

অন্যদিকে সম্ভাবনাময় কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথরসহ অন্য পর্যটনকেন্দ্রে আসতে হলে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মেঘালয়ের পর্যটকদের পাড়ি দিতে হয় ১৫০ কিলোমিটার পথ। একইভাবে বাংলাদেশের পর্যটকরা ভারতের চেরাপুঞ্জিতে যেতে হলে তামাবিল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করছেন। সেখানেও প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। ভোলাগঞ্জে ইমিগ্রেশন চালু হলে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েই চেরাপুঞ্জিতে আসা বিদেশি পর্যটকরা একদিনেই ঘুরে যেতে পারবেন সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র। একইভাবে একদিনেই চেরাপুঞ্জি ঘুরে আসতে পারবেন বাংলাদেশের পর্যটকরা।

এসব বিষয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, একটি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বেগবান করতে ইমিগ্রেশন সেবা অত্যন্ত জরুরি। দুই দেশের ব্যবসায়ীরা যে কাজ ২ ঘণ্টায় করতে পারেন, সেটা এখন করতে সময় লাগে প্রায় দুদিন। দু’দেশের যোগাযোগ সহজতর করতে ইমিগ্রেশন সেবা দ্রুত চালু করতে হবে। তাহমিন আহমদ আরো বলেন, সিলেট অঞ্চল পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময়। সেখানে যদি বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াত সহজতর করা যায় তাহলে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও শেওলাকে একই সময় স্থলবন্দর ঘোষণা করে সরকার। হিসাব মতে শেওলার আগে ভোলাগঞ্জে উন্নয়নকাজ আগে হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। অথচ শেওলা বন্দরে জমি অধিগ্রহণ শেষে উন্নয়নকাজ চলমান। এ বছরের শেষদিকে সেটি পুরোদমে চালুর কথা রয়েছে। কিন্তু পিছিয়ে আছে ভোলাগঞ্জ।

তামাবিল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম ভূঁইয়া দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরটি পরিদর্শন করেছি। এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালকসহ জেলা প্রশাসনের একটি টিম। জমি অধিগ্রহণের জন্য এক বছর আগে জেলা প্রশাসনে চিঠি দেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে সময়মতো অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। জানুয়ারির শেষ দিকে জেলা প্রশাসন থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরে জমির বিষয়ে ছাড়পত্রের আবেদন করা হয়েছে। এখন পরিবেশের ছাড়পত্র পেলেই জমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে। পরবর্তীতে উন্নয়নকাজের বাজেট নির্ধারণ করে কাজ শুরু হবে।

জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক এমরান হোসেন দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, দু-একদিনের মধ্যেই আমরা জায়গা পরিদর্শনে যাবো। খুব শিগগিরই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন