ঢাকা | রবিবার
৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রাহকের মনোবল ভেঙে প্রতারণা

বিমা কোম্পানি পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের

মৃত ব্যক্তির টাকা নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি বিমা কোম্পানি পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে। গ্রাহক মারা যাওয়ার তিন বছর পরও বিমা দাবি পরিশোধ করছে না কোম্পানিটি। দাবি আদায়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে কয়েক হাজার টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারকে। তবুও মেলেনি টাকা। হয়রানি আর অর্থের বিনিময়ে মিলেছে একের পর এক আশ্বাস।

মো. আবদুর রাজ্জাক। বর্তমানে মৃত. আবদুর রাজ্জাক। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন গৃদকালিন্দিয়ায়। ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর একটি পলিসি কেনেন পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স থেকে। যার মূল্য ৯৬ হাজার টাকা। পলিসি নং ১৪১০৪০৬৯৪৫৬। মাসিক প্রিমিয়াম এক হাজার টাকা।

সূত্রমতে, ২০১৮ সাল থেকে বিমা দাবির টাকা পেতে কোম্পানির পেছনে ঘুরছেন মৃত. আব্দুর রাজ্জাকের পরিবার। টাকা উদ্ধারের আশায় প্রথমে ফরিদগঞ্জ অফিস এরপর চাঁদপুর জেলা অফিস এবং সর্বশেষ কোম্পানির প্রধান অফিসে ধরনা দেন। সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পর কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বেঁধে দেয়া হয় সময়। নির্ধারিত সেই সময়ে গত ২২ মার্চ প্রধান কার্যালয়ে আসেন মৃত আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রীর বড় ভাই আবদুল লতিফ ভুঁইয়া। কথা ছিলো এই তারিখেই বুঝিয়ে দেয়া হবে বিমা দাবির টাকা।

তবে নির্ধারিত তারিখে টাকা পাননি, পেয়েছেন একটি কাগজ। যেখানে পরিষ্কার করে লেখা রয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের কথা। কাগজে উল্লেখিত তারিখের মানেও গ্রাহককে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছেন ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে চেক ইস্যু করবেন। ডেকে নিয়ে এসে এমন করার কারণ কী- জানতে চাইলে কোম্পানির ফান্ডে টাকা নেই বলে জানানো হয়। পরে বাধ্য হয়েই গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছে তাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রাহকদের চেক ইস্যুর নামে বহুদিন ধরেই সময় ক্ষেপণ করছে কোম্পানিটি। চেক ইস্যু করে তিন মাস পর ব্যাংকে জমা দেয়ার নাম করে ফের সময় ক্ষেপণ করে। এভাবেই গ্রাহকের মনোবল ভেঙে দেয় তারা। হয়রানির শিকার হতে হতে একসময় চুপসে যায় অনেক গ্রাহক। শেষ ভরসা হিসেবে তারা দ্বারস্থ হন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে। তবে সেখানে অভিযোগ দিয়েও তেমন কাজ হয় না বলে দাবি ভুক্তভোগী অনেক গ্রাহকের। তাদের অভিযোগ এক বিমা দাবির জন্য একাধিক অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বছর পেরিয়ে গেলেও বুঝে পান না বিমা দাবি। তাই বাধ্য হয়ে অনেক মামলা করেন।

তবে অর্থের অভাবে মামলা চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই মামলা করতেও এখন আর ভরসা পান না গ্রাহকরা। বিমা আইন অনুসারে, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয় তাহলে বর্তমান ব্যাংকের সুদের চেয়ে বেশি হারে বিমা দাবির সুদ দিতে হয়। তবে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না।

ভুক্তভোগী আবদুর রাজ্জাকের বিমা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ এজেন্ট অফিসের অফিসার আরিফ হোসেন দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, গ্রাহক ২০১৮ সালে মারা গেছেন। চুক্তি অনুযায়ী গ্রাহকের রেখে যাওয়া নমিনি স্ত্রী ফারজানা আক্তার রিনা বিমা দাবি বুঝে পাবেন। বিমা দাবি বুঝে পেতে ফারজানার ভাই আবদুল লতিফ ভুঁইয়া কাগজপত্র নিয়ে কয়েকবার প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছেন। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে জানি। তবে টাকা বুঝে পায়নি এখনো।

কেন টাকা পাচ্ছেন না? সে বিষয়ে কিছু জানেন কি-না প্রশ্ন করলে আরিফ হোসেন বলেন, যতটুকু জানি কোম্পানির ফান্ডে টাকা নেই। গ্রাহকের টাকা দেয়ার জন্য কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করা হচ্ছে। এজেন্ট অফিসের অফিসার আরো বলেন, আমরা কমিশনের বিনিময়ে পলিসি বিক্রি করি। কোম্পানি গ্রাহকের টাকা দিতে না পারায় গ্রাহক আমাদের ওপর হামলা করছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। আমরা গ্রাহককে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।

এ বিষয়ে জানতে পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অফিসিয়াল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তাদের অফিসের সবগুলো নাম্বারই বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব এসএম শাকিল আখতার দুঃখ প্রকাশ করে দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী সবকিছুই করছি। কিন্তু কোম্পানিগুলো আইনও মানে না। তারা একের পর এক প্রতারণা করেই যাচ্ছে। জনবল সঙ্কটের কারণে আমরাও এগোতে পারছি না।

পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রশাসন এবং অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সদস্য মইনুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী গ্রাহককে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। লিখিত অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী কাজ করবো।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন