দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রধান রপ্তানী আয়ের উৎস হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে পোশাক খাত। আর একক বাজার হিসেবে এ খাতের সর্ববৃহৎ বাজার এখন যুক্তরাষ্ট্র। জিএসপি সুবিধা না থাকলেও বৈশ্বিক পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেশেটিতে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গত বছর বাংলাদেশ ৭১৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। যা ২০২০ সালের রপ্তানির চেয়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি। তবে চলতি বছরের প্রথম মাসে সেই প্রবৃদ্ধিকেও টপকে গেছে বাংলাদেশ ।
সব মিলিয়ে গত জানুয়ারিতে ৭৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা, যা দেশীয় মুদ্রায় ৬ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার সমান। এই আয় গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে সাড়ে ৪৫ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য ওঠে এসছে। এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৭৫৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বলছেন, বাণিজ্যযুদ্ধ ও করোনার কারণে বছর বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারাচ্ছেন চীনের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। সেই ব্যবসা এখন পাচ্ছে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারক চীন আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে চীন। যা গত বছরের জানুয়ারির ১২৯ কোটি ডলারের চেয়ে ৪৭ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক ভিয়েতনামের রপ্তানি খুবে একটা বাড়েনি। গত বছরের জানুয়ারিতে দেশটি যেখানে ১০৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল। সেখানে এবার করেছে ১২৮ কোটি ডলার। তাদের রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ।
বাজারটিতে তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। এরপরের অবস্থানে ভারত। গত জানুয়ারিতে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি। পঞ্চম স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৭ শতাংশ বেশি।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার সাথে চীনের সম্পর্কের কারণে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আগমীতে পোশাক রপ্তানী কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে দেশটির বাজারে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ আরো বেশি রপ্তানীর সুযোগ পাবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। যদিওে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে কীভাবে দেখবে সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
এদিকে শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়ন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণসহ মানবাধিকার রক্ষা ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করতে বাংলাদেশে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) মিশন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইইউ দূতাবাসের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে দেশের শ্রম ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর কর্ম পরিকল্পনার বাস্তবায়নের অবস্থা দেখবে তারা।
নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতিও মূল্যায়ন করবে দলটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে অস্ত্রবাদে সকল পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ইইউ ঘোষিত চলমান জিএসপি স্কিমের মেয়াদ ২০২৩ সালেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন স্কিমে বাংলাদেশের ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য ৯ দফা একশন প্লান দিয়েছে ইইউ।
এসব দেখতে দেশে আসবে প্রতিনিধি দলটি। এটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ইইউ দেশগুলো অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য।
আনন্দবাজার/শহক