সাপ্তাহিক পুঁজিবাজার——
- মূলধনে মন্দা, সূচক পতন
- মূলধন কমেছে ৫৫৫৬ কোটি টাকা
বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতন হয়। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একটি বাদে বাকি চার ধরনের সূচক পতন হয়। সপ্তাহটিতে ডিএসইর লেনদেন বাড়লেও সিএসইর কমেছে। সপ্তাহটিতে দুই পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ডিএসই ও সিএসইর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএসই ও সিএসইর সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১০৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে বা ৩ মার্চ লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২৪ ফেব্রুয়ারি মূলধন ছিল ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ১৭ ফেব্রুয়ারি মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) লেনদেন শেষে সিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে বা ৩ মার্চ লেনদেন শেষে সিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন ছিল ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মূলধন ছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৫৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মূলধন ছিল ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯৪২ কোটি ৩ লাখ টাকা।
গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজার ডিএসইতে মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৩২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ২ হাজার ২৩৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৯২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ১০ হাজার ৫১৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইতে মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৫৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ৯ হাজার ৭৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তার আগের সপ্তাহে ডিএসইতে মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৮২৩ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ৭ হাজার ৯৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে মূলধন বেড়েছিল ৪ হাজার ৫৭০ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ৩ হাজার ৯৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
চলতি বছরের প্রথম তিন সপ্তাহ (১৫ কার্যদিবস) কারণ বিহীন বেড়ে উঠেছিল পুঁজিবাজার মূলধন। হঠাৎ করেই এরপর দুই সপ্তাহ (১০ কার্যদিবস) মূলধন কমতে দেখা গেছে। তাল মিলিয়ে বছর শুরুর তিন সপ্তাহে লেনদেন উত্থানে চমক থাকলেও এরপর দুই সপ্তাহে লেনদেন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। পরের এক সপ্তাহ মূলধন বৃত্ত বেড়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে পরের চার সপ্তাহে মূলধন কমছে।
পুঁজিবাজারে মূলধন বাড়া-কমা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে অতিরিক্ত বৃদ্ধি যেমন ভালো লক্ষ্মণ না, তেমনি কমাও নয়। সব ক্ষেত্রেই বাড়া-কমার একটা সীমা থাকে। যখন সেই সীমা অতিক্রম করে, সেই ক্ষেত্রে সবার মনে অনেকগুলোর প্রশ্ন তৈরি হয়। এসব প্রশ্নের পরিষ্কার ও যৌক্তিক জবাব জানা থাকলে, সেটা অন্য কথা। না জানা থাকলে সেই ক্ষেত্রে বিজ্ঞরা বিযয়টি ভালো চোখে দেখে না।
চলতি বছরের শুরুর প্রথম ১৫ কার্যদিবস পুঁজিবাজরের দুই স্টকের (ডিএসই ও সিএসই) মূলধন বেড়েছিল ৪৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। মূলধনের এ ধরনের বৃদ্ধিকে বাঁকা চোখে দেখেছিলেন অনেকেই। এই বৃদ্ধির কারণে নানান ধরনের প্রশ্ন জন্ম দিয়েছিলো। অনেকেই মনে করেছিলেন পুঁজিবাজারে থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে খারাপ চক্রদের নতুন কৌশল।
এসব কারণে অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত ছিলেন। বিরত থাকার পরের দুই সপ্তাহ বা ১০ কার্যদিবস পুঁজিবাজরের দুই স্টকের মূলধন কমেছিল ৬ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এর পরের সপ্তাহ দুই স্টকের মূলধন ৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা বেড়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে পরের চার সপ্তাহে দুই স্টকের মূলধন কমেছে ৬১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। এ ধরনের কমার স্বাভাবিক নিয়মে হয়নি বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে সূচকসহ লেনদেন উত্থান ক্ষেত্রে চমক। কেন দেখাচ্ছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। হতে পারে গত বছরের শেষদিকের মন্দা পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে তারাই নতুন বছরে পুঁজিবাজার উত্থান ঝলক ছিল। তাই বছরের শুরুর প্রথম তিন সপ্তাহে পুঁজিবাজার উত্থান ছিল। তবে উত্থানের একটা লাগাম থাকে। সেটা অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হাত থেকে রক্ষা করে।
অস্বাভাবিক উত্থানের পর পরের কয়েক সপ্তাহে পুঁজিবাজারের উত্থান পথ কিছুটা বাধা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে হঠাৎ করেই গত চার সপ্তাহের ধারাবাহিক পতন চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের। সবমিলিয়ে পুঁজিবাজারে অতি দামে শেয়ার ক্রয় করা থেকে বিরত সহ লোকসানে শেয়ার বিক্রয় না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে, গেল সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারের সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬৮ দশমিক ১৫ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৩৭ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২৫ দশমিক ১১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৩৫ দশমিক ৪০ পয়েন্টে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১০ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫৬১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই ৫০ সূচক ৫ দশমিক ৭১ পয়েন্ট, সিএসই৩০ সূচক ৩২ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৯ দশমিক ২২ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ২ দশামক ৫৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৪৩ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৮৮১ দশমিক ৩০ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৭৩৭ দশমিক ১৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২১৯ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৯৭২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২২৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অপরদিক গেল সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ১৩৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
গেল সপ্তাহে দুই পুঁজিবাজারে বেড়েছে ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর। কমেছে ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর। সপ্তাহটিতে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৯১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২০৭টির বা ৫২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, দর কমেছে ১৫৬টির বা ৩৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির কোম্পানির।
লেদনের হয়নি পাঁচ কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২০১টির বা ৫৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, দর কমেছে ১১৬টির বা ৩৫ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির কোম্পানির।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে এ ক্যাটাগরির ২ হাজার ৯০৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৩ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সময় বি ক্যাটাগরির ৬৫৭ কোটি ২০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, এন ক্যাটাগরির ১৮০ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও জেড ক্যাটাগরির ৬৩ কোটি ২১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে।
ওই সপ্তাহে সিএসইতে এ ক্যাটাগরির ৬৬ কোটি ৪২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৬ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সময় বি ক্যাটাগরির ২৬ কোটি ২২ লাখ ৩১ হাজার ৫৩০ টাকা, এন ক্যাটাগরির ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৭৯ হাজার ২৩৮ টাকা ও জেড ক্যাটাগরির ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫ হাজার ৫৯২ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে।