ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জ্বালানি তেলের সংকট

জ্বালানী তেলে সংকট

প্রাকৃতিক গ্যাসে ভরপুর সিলেট বিভাগে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের। বিভাগীয় শহরটির কয়েকটি ফিলিং স্টেশন ইতোমধ্যে তেলশূন্য হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও তেল সংকটের সুরাহা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে সিলেটে। এর মধ্যে বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে গড়ে মাত্র ৩ থেকে সোয়া ৩ লাখ লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে। সিলেটের চারটি ডিপোর মধ্যে ভাগাভাগি করে এসব তেল দেয়া হচ্ছে। কোনো কোম্পানিই গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বছর খানেক আগেও সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রসহের খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে সিলেটের পাম্পগুলোতে সরবরাহ করা হতো। সে সময় সিলেটে জ্বালানি তেলের তেমন সংকট দেখা যায়নি। তবে বছরের বেশি সময় ধরে সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে পাম্পে জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবর্তে পাম্প মালিকদের ওয়াগনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে গ্যাস সংকট বাড়তে বাড়তে অসহনীয় হয়ে পড়েছে।

সিলেটের ফিল্ডগুলোতে উত্তোলন বন্ধ ও চট্টগ্রাম থেকে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্বালানি তেল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতার পেছনে পরিবহন সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোনোভাবেই তারা জ্বালানি তেলের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়ে কিংবা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না তারা।

সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমানের মতবিনিময় হয়। সভায় এক সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। এ সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারিও দেন। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও তখন দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সংকটের কোনো সমাধান না হওয়ায় এবার জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা আগামীকাল বুধবার থেকে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, আমাদের আর কিছু করার নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে বুধবার সিলেটের রাস্তায় ট্যাংক-লরি দাঁড় করিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবো। এরপরেও সমাধান না এলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবো।

মহাসচিবের ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস্ অ্যান্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি, বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি, বাংলাদেশ এলপিজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি এবং সিলেট বিভাগীয় ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিলেট বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প সিএনজি এলপিজি, ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’র নেতৃবৃন্দ। এর আগে গত রোববার তারা জ্বালানি তেলের সংকটের বিষয়টি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবারো চিঠি দিয়েছেন।

আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া সংগঠনের নেতারা বলছেন, সিলেটে গত প্রায় দেড় বছর ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেলের উৎপাদন বন্ধ। সিলেটে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। যে কারণে সংকট পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। গত বছরের অক্টোবরে সিলেটে তেলের তীব্র সংকট দেখা দিলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় বৈঠক করে আন্দোলনের হুমকি দেয়ার পর তেলের সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো হয়। তবে সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিলো না।

এরই মাঝে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে আবারও সিলেটে তেলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। সারা মাসই কাটে সংকটের মধ্য দিয়ে। এমন সংকটের জন্য সংশ্লিষ্টরা সিলেটে উৎপাদন বন্ধ, চট্টগ্রামে তেলশূন্যতা ও রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ওয়াগন আসার অনিয়মকে দায়ী করছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন