ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাঠের শিল্পে ঘুরছে ভাগ্যের চাকা

বাংলাদেশের এক প্রাচীনতম শিল্প হচ্ছে কাঠ শিল্প। ঘূর্ণায়মান কাঠের টুকরোতে বাটালির ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে নানান রকমের বাহারি ফুলদানি, প্রসাধনের কৌটা, কিংবা রুটি বেলার বেলন। এই কাঠ শিল্পের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে যশোরের কেশবপুর উপজেলার চারটি গ্রামের কয়েকশ পরিবারের ভাগ্য।

যশোরের আলতাপোল, কন্দর্পপুর, বড়েঙ্গা ও মঙ্গলকোট গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারই এখন কাঠ দিয়ে নিত্য ব্যবহার্য নানা সামগ্রী তৈরির সাথে যুক্ত। কাঠের এই শিল্প এখন তাদের স্বাবলম্বী করে তুলছে।

প্রায় নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে আলতাপোল গ্রামের ইনসার আলী ভারত থেকে কাঠের এসব বাহারী নকশা শিখে এসে কাঠের কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের ভেতরই এ কাজে সফলতার মুখ দেখেন তিনি। তার সাফল্যে উদ্ধুদ্ধ হয়ে আস্তে আস্তে এ কাজে যুক্ত হন গ্রামের অনেকেই।

প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনায় বিগত বছরগুলোতে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় ফলে কেশবপুরের এ কুটির শিল্প এখন চারটি গ্রাম ছাড়িয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। প্রতিতি পরিবারে নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও পারদর্শী হয়ে উঠছে এই শিল্পে। নারীরা নিয়মিতভাবে এ কাজের সাথে যুক্ত হওয়ায় বেড়েছে পরিবারের আয় ।

কাঠ শিল্প নিয়ে কথা বলতে গেলে কন্দর্পপুর গ্রামের একটি কারখানার মালিক সাঈদ তুহিন জানান, মূলত মেহগনি কাঠ থেকে তারা এসব তৈজস তৈরি করেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা সংগ্রহ করেন এসব কাঠ।

প্রাচীন এই ধারা অব্যহত রাখতে বাড়িতে বাড়িতে গড়ে ওঠা ছোট ছোট কারখানায় কাঠের টুকরা দিয়ে তারা তৈরি করছেন বাহারি ফুলদানি, মোমদানি, ছাইদানি, বাটি, পাউডার কেইস, বয়াম, চরকা, খুন্তি, বেলুন, টাকা জমানোর ব্যাংক, সিঁদুরদানি, টিফিন বক্স, হামানদিস্তা, চামচসহ নিত্য ব্যবহার্য নানা পণ্য। পাশাপাশি নানা রকম শোপিসও তৈরি করছেন তারা।

কেশবপুরের কাঠের শিল্পী মনিরুল হাসান জানান, এ গ্রামে এরকম পাঁচ শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে বাড়িতে বাড়িতে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে কমপক্ষে ২০-২৫ হাজার মানুষ।

বর্তমানে কেশবপুরের গ্রামে তৈরি এসব কাঠের সামগ্রী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। পাইকাররা বাড়িতে এসেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে এসব তৈজস।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই গ্রামের শত শত মানুষ মিলে গড়ে তুলেছেন এই শিল্প। যদি কোনো ধরণের সরকারি সহযোগিতা পান তাহলে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করছেন এই কুটিরশিল্পীরা।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন