ঢাকা | সোমবার
৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভ্যাট ফাঁকিতে ফেমাস

তদন্ত করে ফেমাস গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের ৮০ কোটি ২৮ লাখ টাকার গোপন বিক্রয় হিসাব জব্দ করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এতে সরকারের
  • ৮০ কোটি টাকার বিক্রির তথ্য গোপন
  • ভ্যাট ফাঁকি ১৩ কোটি টাকার
  • দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

তদন্ত করে ফেমাস গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের ৮০ কোটি ২৮ লাখ টাকার গোপন বিক্রয় হিসাব জব্দ করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এতে সরকারের ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গতকাল বুধবার ওই দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়।

বিকেলে ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ফেমাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড এবং ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস এন্ড ফ্র্যাগনেন্সেস লিমিটেড।

প্রতিষ্ঠান দুটি গাজীপুরে অবস্থিত। কর্পোরেট অফিস গুলশানে। প্রতিষ্ঠানগুলো খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহৃত কেমিকেল (ফ্লেভার) এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কের প্যাকেজিং সামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহ করে।

মইনুল খান বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটি প্রকৃত সেবা বিক্রির তথ্য গোপন করে চালান ব্যতিত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘদিন সরকারের ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল হক ও মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে গত বছরের ২৩ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের প্রধান করপোরেট অফিস ইসলাম লডস (দ্বিতীয় তলা) গুলশান এক এ অভিযান চালায়।

অভিযানে গোয়েন্দারা দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত ঘোষিত বিক্রয় তথ্য গোপন করে মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুকায়িত অবস্থায় জব্দ করা হয়। এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সাথে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পায়।

তদন্ত অনুসারে, ফেমাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকিং তথ্য অনুসারে ৮৬৯ কোটি ১০ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকার পণ্য বিক্রি করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গাজীপুর ভ্যাট সার্কেল-৫ এ মাসিক রিটার্নে ৮২৭ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ২৪৫ টাকা বিক্রিয় হিসাব প্রদর্শন করা হয়। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার ৫১২ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৫ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

এছাড়া ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস এন্ড ফ্র্যাগনেন্সেস লিমিটেড ২০২০ সালের জানুয়ারি হতে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৫১ টাকার পণ্য বিক্রি করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট টঙ্গী সার্কেল-৪ এ মাসিক রিটার্নে ২০ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৩০ টাকা বিক্রিয় হিসাব প্রদর্শন করে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ২৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ৭০৭ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়।

এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৬ টাকা সুদ প্রযোজ্য। তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান দুইটির মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭ হাজার ৬৮৭ টাকা এবং সুদ বাবদ ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫১ টাকাসহ মোট ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৮ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। গতকাল বুধবার ফেমাস গ্রুপের ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তে পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন