ঢাকা | বুধবার
১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুঁজিবাজারে বাঁকা চোখ

পুঁজিবাজারে বাঁকা চোখ
  • অর্ধেক নেমে গেল লেনদেন
  • ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফল
  • ৪৬ ভাগ কোম্পানির দর উত্থান, পতন ৪০
  • সেরা ডিএসইতে বেক্সিমকো
  • সিএসইতে ইউনিয়ন ব্যাংক

ডিএসইতে সব ধরনের সূচক উত্থানে, সিএসইতে একটি বাদে বাকি চার ধরনের প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ। উভয় স্টকের ৪৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন সাতশ কোটি টাকার ঘরে থেকে বের হতে পারেনি।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক- দেড় হাজার কোটি টাকার লেনদেন বর্তমানে হাজার কোটি টাকা নিচে নেমে এসেছে। এই ধরনের লেনদেন কমে যাওয়াকে বাঁকা চোখে দেখছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ এমন কমে যাওয়ার জন্য ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে দুষছেন অনেকে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুদ্ধের কোনো প্রভাব নেই।

ডিএসইতে গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৭৩০ কোটি ১ লাখ টাকা। সোমবারের লেনদেন গত দুই মাস ৫ দিন বা ৪৮ কার্যদিবসের মধ্যে সবনিম্ন ছিল। চলতি বছরের শুরু থেকেই ডিএসইর লেনদেন এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার ঘরে ছিল। চলতি বছরের বেশকিছু দিন লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে ছিল। হঠাৎ করেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে। এই ধরনের লেনদেন কমে যাওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি বিজ্ঞবিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইতে মঙ্গলবার সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একটি বাদে বাকি চার ধরনের প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন উভয় স্টকের ৪৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। আগের কার্যদিবস থেকে এদিন দুই স্টকের লেনদেন পরিমাণ বেড়েছে। ডিএসইর লেনদেন এদিন সাতশত কোটি টাকার ঘরে থেকে বের হতে পারেনি। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুঁজিবাজারে (দুই স্টক) এদিন ৪৬ দশমিক ১২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং সিএসইর ৪৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারে ৪০ দশমিক ৬২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৪৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সিএসইর ৩৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। গত দুই কার্যদিবস পতনের পর মঙ্গলবার কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এ ধরনের বাড়াকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিন বিমা, সেবা আবাসন, পাট, চামড়া, ওষুধ রসায়ন এবং বিবিধ খাতের কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এদিন বিমা খাতের ৮৫ শতাংশ, সেবা আবাসন খাতের ৭৫ শতাংশ, পাট খাতের ৬৭ শতাংশ, চামড়া খাতের ৬৭ শতাংশ, ওষুধ রসায়ন খাতের ৫৭ শতাংশ এবং বিবিধ খাতের ৫৭ শতাংশ দর উত্থান হয়েছে। এদিন সিরামিক, বস্ত্র, আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমেন্ট এবং জ্বালানি শক্তি  খাতের কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এদিন সিরামিক খাতের ৮০ শতাংশ, বস্ত্র খাতের ৬৫ শতাংশ, আইটি খাতের ৬৪ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের ৬২ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের ৫৭ শতাংশ এবং জ্বালানি শক্তি খাতের ৫৬ শতাংশ দর পতন হয়েছে।

এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। অপরদিকে সিএসইতে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে ডিএসইতে বেক্সিমকো এবং সিএসইতে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকো ১১৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৪৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ১৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়ারটেক ১৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, কেয়া কসমেটিকস ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা, ড্রাগন সোয়েটার ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং সোনালি পেপার ১০ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

এছাড়া এদিন সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ইউনিয়ন  ইন্স্যুরেন্স ৭৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৭৭ লাখ টাকা, রবি ৬৪ লাখ টাকা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ৬৪ লাখ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ৫৯ লাখ টাকা এবং জিএসপি ফাইন্যান্স ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৭৭টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৬৩টির, কমেছে ১৬৮টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৪৬টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৫৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৭ দশমিক ৬০ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক দশমিক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে।

এদিনে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ওঠে এসেছে তাক্কাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর। এরপর শীর্ষে ওঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর রয়েছে- সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, কেয়া কসমেটিকস, কে অ্যান্ড কিউ, বেক্সিমকো, মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং, বিডি থাই ফুড ও এডভেন্ট ফার্মা। অপরদিকে, দর কমার শীর্ষে ওঠে এসেছে ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ারের শেয়ার। এরপর কমার শীর্ষে ওঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর রয়েছে-  তাল্লু স্পিনিং, ক্রাউন সিমেন্ট, বেঙ্গল উইন্ডসোর, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, সাইফ পাওয়ারটেক, ইটিএল, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, স্টাইলক্র্যাফট ও আমান ফিড।

অপরদিকে সিএসইতে এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৪৮টির, কমেছে ১১৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৪০টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৭৮ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭১৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে। সিএসই-৫০ সূচক ৬ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৪৭ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৫৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২২৯ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৩৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে।

সংবাদটি শেয়ার করুন