জাতীয় বিমা দিবসে প্রধানমন্ত্রী
- গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে
- অনিয়ম রোধে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ
- বিমাকে ডিজিটাইজ ও অটোমেশনের মধ্যে আনতে হবে
গ্রাহক হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিমা মানে একটা আমানত। কেউ যেন তার প্রাপ্য চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার না হয়। প্রাপ্য যেন সহজেই পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বিমা নিয়ে নানা হয়রানি বন্ধ করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় বিমা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমা নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়াতে গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিমা বিষয়ে মানুষকে আগ্রহী করতে নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগানোর পাশাপাশি ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর বিমা করে। এরপর অসত্য তথ্য দিয়ে প্রিমিয়াম থেকে টাকা দাবি করে। এমন অনেক দাবি আমি ব্যাক্তিগতভাবে তদন্ত করিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনেও প্রতারণার সত্যতা পেয়েছি। এমনও দেখেছি সব পণ্য বিক্রি করে ভাড়াটে লোক দিয়ে প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর প্রিমিয়াম থেকে বিমা দাবি করেছে তারা। এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে তা বন্ধ করিয়েছি।
এসব বিষয়ে সর্তক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এসব পরীক্ষা করে তাদের ভালোভাবে শিক্ষা দিতে হবে। তারা যেন আবার অন্য কোনোভাবে ওই অল্প ক্ষতিকে বড় ক্ষতি করে না দেখায়। বিমা দাবিতে এসব অনিয়ম দূর করতে প্রযুক্তির ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। বিমা ব্যবস্থাকেও ডিজিটাইজ ও অটোমেশনের মধ্যে আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বিমা ব্যবস্থা দেশে চালু হোক, সেটা আমরাও চাই। সরকার বেশ কয়েকটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অনুমতি দিয়েছে। এগুলো আরও কার্যকর করতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিমা চালু করতে চাই। এজন্য কাজ শুরু করতে হবে। বিমা জনপ্রিয় করাসহ এর সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিমা কোম্পানিতে কাজ করতেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের আলফা ইন্স্যুরেন্সে বঙ্গবন্ধু যোগদান করেছিলেন। দীর্ঘ ২৩ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করে বাঙালি জাতিকে ধাপে ধাপে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন। যখন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলো তখন তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্সে কাজ করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত রেখেছেন। আলফা ইন্স্যুরেন্সের অফিসে বসেই ছয় দফা দাবি আদায়ের জন্য কাজ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য প্রবাসী কর্মী বিমা চালু করা হয়েছে। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি মোকাবিলায় হাওর এলাকায় সীমিত পরিসরে আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বিমা চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাবা-মা, অভিভাবকের অকাল মৃত্যুতে বা শারীরিক অক্ষমতায় তাদের শিক্ষাজীবন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা’ পরিকল্প চালু করা হয়েছে। সর্বসাধারণের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে সাধারণ বিমা করপোরেশন ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা’ চালু করেছে। সাধারণ বিমা করপোরেশন পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর বিমা ঝুঁকি গ্রহণ করেছে।