- ডিজেলে বাড়তি খরচ ১৩৬৭ কোটি টাকা
- বেড়েছে সার ও শ্রমিক মজুরি
- বিঘাপ্রতি খরচ বেড়েছে ২০০০ টাকা
এবার গত বছরের তুলনায় প্রতি বিঘাতে তার খরচ বেড়েছে ২ হাজার টাকার বেশি। শ্রমিক খরচ আগে ছিল ৩৫০ টাকা। এবার তা হয়ে গেছে ৪৫০ টাকার বেশি। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে সেচ ও ট্রাক্টরের চাষের খরচ। সারও সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশে প্রতি বছর বোরো আবাদ হয় ৪৭ থেকে ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এ সময়ে দেশে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৮ হেক্টর জমিতে। এ বছরের কমবেশি এ পরিমাণে জমিতেই আবাদ হতে যাচ্ছে বোরোর। তবে এবার আবাদের খরচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বেড়েছে ডিজেলের দাম। সঙ্গে বেড়েছে সার ও শ্রমিক মজুরির দাম।
বোরো মৌসুমের পুরো সময়ে এক বিঘা জমিতে সেচের জন্য ৩৫ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের হিসাবে দেশে বছরে ২৬ লাখ টন ডিজেল ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে বোরো মৌসুমে লাগে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন। বোরো মৌসুমে প্রায় ৩৫ লাখ হেক্টর জমিতে ডিজেল চালিত সেচযন্ত্রের মাধ্যমে ধান উৎপাদন করা হয়।
হেক্টর প্রতি এবার কৃষককে বেশি গুনতে হবে ৩ হাজার ৯০৬ টাকা। যার সারা দেশে ৩৫ লাখ হেক্টর জমি ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে আবাদ করা হয়। গত বছরের হিসেবে (৬৫ টাকা লিটার) থাকলে ডিজেলে ৩৫ লাখ হেক্টর জমি আবাদ করতে খরচ পড়তো ৫ হাজার ৯২৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় এবারে একই পরিমাণ জমিতে ডিজেলে খরচ হবে ৭ হাজার ২৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ পরিমাণ জমি আবাদ করতে কৃষককে এবার ডিজেলে বেশি গুণতে হবে এক হাজার ৩৬৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বোরো চাষে খরচ বাড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন রাজশাহীর কৃষকেরা। কৃষকেরা বলছেন, গত বছর নভেম্বরে দেশে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ১৫ টাকা বেড়ে গেছে। বর্তমানে ৮০ টাকা লিটারে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে সেচ ও ট্রাক্টরে খরচ বেড়ে গেছে। শ্রমিকের মজুরিও কৃষককে ভাবাচ্ছে। এর মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকেরা সার পাচ্ছেন না।
রাজশাহীর বাগমারার কৃষক মকসেদ আলী। এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। চারা রোপণ পর্যন্ত প্রতি বিঘায় তার খরচ পড়েছে ৯ হাজার টাকার মতো। এরপর জমিতে সার দেয়া, নিড়ানি, ধান কাটা ও মাড়াই রয়েছে। সাথে রয়েছে ডিজেল চালিত ইঞ্জিনে সেচ দেয়া। সেগুলোর খরচ নিয়ে চিন্তিত এ কৃষক।
মকসেদ আলী বলেন, এবার গত বছরের তুলনায় প্রতি বিঘাতে তার খরচ বেড়েছে ২ হাজার টাকার বেশি। শ্রমিক খরচ আগে ছিল ৩৫০ টাকা। এবার তা হয়ে গেছে ৪৫০ টাকার বেশি। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে সেচ ও ট্রাক্টরের চাষের খরচ। সারও সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না।
গোদাগাড়ীর বানদুড়িয়া হাজীপুর গ্রামের কৃষক নরেশ হেমব্রম জানান, তিনি এবার দুই বিঘায় ধান লাগিয়েছেন। তার এলাকায় আগে প্রতি ঘণ্টায় সেচ দেওয়া হতো ১১০ টাকায়। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, জমি খালি থাকলে খারাপ লাগে। এ কারণে চাষ করা আরকি। ধানের দাম তো আর বেশি পাওয়া যায় না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ৬৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর চারা রোপণ করা হয়েছে। রাজশাহী জেলায় সাড়ে ২২ হাজারের বেশি ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র রয়েছে।
তানোর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মজিদ মিয়া এবার ৪ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় ধানের চারা রোপণ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। তার অভিযোগ, এবার তাঁকে সব ধরনের সার বস্তাপ্রতি (৫০ কেজির বস্তা) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি গুনতে হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রচার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে আরও সময় লাগবে। অনেকের খেতে এখনো আলু রয়ে গেছে। তারা আলু তুলে বোরোর চারা রোপণ করবেন। ডিজেলের দাম বাড়ায় কিছুটা খরচ বেড়েছে। তবে সারের দাম বাড়েনি। সরকার কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। আর কৃষকও নানা উন্নত কৃষি উপকরণ সহজলভ্যে পাচ্ছেন। ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা টিএসপি সারের সরকার নির্ধারিত দাম ১ হাজার ১০০ টাকা। আর এমওপি ৭৫০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা, ইউরিয়া সার ৮০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে তানোর, পুঠিয়া ও গোদাগাড়ী উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা টিএসপি ১ হাজার ৪০০ টাকায়, এমওপি ৯০০ টাকায়, ডিএমপি ১ হাজার টাকায় ও ইউরিয়া ৯০০ টাকায় কিনেছেন।