ঢাকা | সোমবার
১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিংড়ির জেলায় অর্থনৈতিক জোন

চিংড়ির জেলায় অর্থনৈতিক জোন

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় সাতক্ষীরা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ

  • কাকড়া উৎপাদনে নতুন মাত্রা
  • সুন্দরবন ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনা
  • দ্বিতীয় বৃহৎ স্থলাবন্দর ভোমরা
  • সৃষ্টি হবে বিকল্প কর্মসংস্থান
  • উপকূলে কমবে অভিবাসনের হার

বিশ্লেষকেরা বলছে, শুধু অর্থনৈতিক জোন গঠিত হলেই হবে না, এলাকাভিত্তিক উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে এলাকাবাসী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

অর্থনৈতিক জোন করার পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য সঠিক মূল্যে বিক্রয় করতে পারবে কৃষকেরা: কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক, সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

অবশেষে সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা জেলাকে ‘অর্থনৈতিক জোন’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি এই জেলার উৎপাদিত পণ্য কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটি প্রত্যাশা জেলাবাসীর। তবে এলাকাভিত্তিক উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে না উঠলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবে এই এলাকার মানুষ-এমনটি মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা কৃষিতে সমৃদ্ধ এই জেলার উৎপাদিত পণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এ ছাড়া দেশের দ্বিতীয় চিংড়ি উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে এই জেলা। তার ওপর কাঁকড়া উৎপাদনেও এসেছে নতুন মাত্রা।

সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যাটনসহ শিল্পসমৃদ্ধ সাতক্ষীরা জেলার অর্থনীতিকে অনন্য স্থানে নিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ স্থলাবন্দর হিসেবে স্বীকৃত ভোমরা স্থলাবন্দর। যে কারণে ৩ ফেব্রুয়ারি এই জেলাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাতক্ষীরায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ভোমরা সিএন্ডএফের আহ্বায়ক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন দীর্ঘদিন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন। জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে।

শেখ এজাজ আহমেদ আরো বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠিত হলে জেলায় কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অপরিসীম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র স্থাপন হবে। আমাদের ছোট ছোট চেষ্টা ছিল এইভাবেই, যখনই সুযোগ পেয়েছি তখনই কাজের জন্য অনুরোধ আর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের সবার এই ছোট ছোট চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।

এ দিকে অর্থনৈতিক জোন গঠিত হলে বিকল্প কর্মসংস্থানের সৃষ্টির পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার মানুষের অভিবাসনের হারও কমবে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছে, শুধু অর্থনৈতিক জোন গঠিত হলেই হবে না, এলাকাভিত্তিক উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে এই এলাকার মানুষেরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক কল্যাণ ব্যানার্জি দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সাতক্ষীরার উৎপাদনমুখী পণ্যের ওপর গড়ে উঠুক। অন্যান্য জায়গায় যেভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল শুধু শিল্প উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে সেটি যদি হয় তাহলে সাতক্ষীরার মানুষ কখনও লাভবান হবে না।

সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, সাতক্ষীরায় প্রায় দুই লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। যার ১৫ ভাগ আমরা ভোগ করি। অবশিষ্ট মাছগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করে থাকি। সরকার সাতক্ষীরা জেলাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেছে। এটি জেলাবাসীর জন্য একটি খুশির সংবাদ। উপকূলীয় জেলা হলেও সাতক্ষীরা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক জোন করার পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য সঠিক মূল্যে বিক্রয় করতে পারবে কৃষকেরা। এই জেলায় কৃষি ক্ষেত্রে রয়েছে অপার সম্ভাবনা, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ফলে এই সেক্টর আরও এগিয়ে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য একটি জায়গা আমরা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছি। সেখানে আমাদের সরকারি খাস জমি কিছু রয়েছে আর কিছু হয়তো একোয়ার করা লাগবে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব আকারে প্রেরণ করেছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন