পুঁজিবাজারে সাপ্তাহিক লেনদেন–
ডিএসইতে ৩৯২ কোম্পানির লেনদেন ৩৯৮৭ কোটি, টপটেন ১১১২ কোটি
- দর পতন হলেও সেরা বেক্সিমকো, ফরচুন সুজ
- গেইনারের সেরা ড্রাগনর, লুজারে জেনেক্স
বিদায়ী সপ্তাহ (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) মন্দায় কেটেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর মধ্যে গেল সপ্তাহে ডিএসইর টপটেন লেনদেনে ভালো কোম্পানির শেয়ার দর প্রতি কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির শতভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। টপটেনের ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। সপ্তাহটিতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি এক হাজার ১১২ কোটি ৩০ লাখ ১৯ হাজার টাকা বা ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ শেয়ার কেনাবেচা করেছে। যেখানে সপ্তাহটিতে ৩৯২টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ২৯৫ টাকার শেয়ার। ডিএসইর সত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এদিকে, ‘গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমেছে দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিই ধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। মানে পিই হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে অর্থের পরিমাণে লেনদেন সেরা অবস্থানে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) শেয়ার। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমলেও দাপটের সাথে লেনদেনের শীর্ষ স্থান দখল করেছে। দরপতন হলেও ফরচুন সুজের শেয়ার লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে। তৃতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটর শেয়ার দরও পতন হয়েছে। এসময় তিন কোম্পানি ৬৮০ কোটি ৭৩ লাখ ৯ হাজার টাকা শেয়ার কেনাবেচা হয়।
বিদায়ি সপ্তাহটিতে বেক্সিমকো একাই ২৯৫ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার টাকার বা ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ শেয়ার কেনাবেচা হয়। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১৪৯ দশমিক ৯০ টাকা। আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার প্রতি দর ছিল ১৫০ দশমিক ৯০ টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১ টাকা বা দশমিক ৬৬ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫৮টি শেয়ার লেনদেন হয়।
দ্বিতীয়তে থাকা ফরচুন সুজ একাই ২৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯১ হাজার টাকার বা ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার কেনাবেচা হয়। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১২৫ দশমিক ৬০ টাকা। আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার প্রতি দর ছিল ১৩৪ দশমিক ৫০ টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৮ দশমিক ৯০ টাকা বা ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। তৃতীয়ত্ব থাকা ওরিয়ন ফার্মা একাই ১৩২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকার বা ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার কেনাবেচা হয়। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১০৪ দশমিক ৫০ টাকা। আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার প্রতি দর ছিল ১১১ দশমিক ১০ টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৬ দশমিক ৬০ টাকা বা ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
লেনদেন শীর্ষে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ৯৬ কোটি ৪০ লাখ ৯১ হাজার টাকা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৬২ কোটি ৪২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ৫৮ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ৫৬ কোটি ৯৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ড্রাগন সোয়েটার ৫৫ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা, সাইফ পাওয়ারটেক ৫২ কোটি ৪১ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং সোনালী পেপার ৪৯ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ড্রাগন সোয়েটার এবং সোনালী পেপারের শেয়ার দর বেড়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো বিধায় নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া ‘এন’ ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
ডিএসইর সূত্রমতে, গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনার তালিকায় ৬০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে ৮০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের দাপট ছিল। অপরদিক, গেইনারে ৪০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি শেয়ার অবস্থান করেছে। লুজারে ১০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং ১০ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। এই ধরনের লেনদেন চিত্রকে সবাই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হচ্ছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা।
তারা বলছে, ‘এ’ ক্যাটাগরির বা ভালো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বেশি হওয়া ভালো লক্ষ্মণ। এটা পুঁজিবাজার ইতিবাচক গতি আরো বৃদ্ধি করবে। গেল সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৩টির বা ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ড্রাগন সোয়েটারের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল। গেল সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এ বৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন গেইনারে শীর্ষে উঠে আসে। অপরদিকে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৮৭টির বা ৭৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সপ্তাহটিতে ‘এন’ ক্যাটাগরির জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে কম ছিল। গেল সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এই কমার মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লুজারের শীর্ষে উঠে আসে।
সপ্তাহটিতে টপটেন গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ক্রাউন সিমেন্ট ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ, এপেক্স স্পিনিং ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, এডিএন টেলিকম ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্যাসিফিক ডেনিমস (বি ক্যাটাগরি) ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, জাহিনটেক্স (বি ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, জাহিন স্পিনিং (বি ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, মুন্নু এ্যাগ্রো ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ডেল্টা স্পিনিং (বি ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।
অপরদিক টপটেন লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইয়াকিন পলিমার (বি ক্যাটাগরি) ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ, কুইন সাউর্থ ১১ দশমিক ১১ শতাংশ, স্টাইল ক্রাফট ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বাংলাদেশ ল্যাম্পস ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, জিল বাংলা সুগার (জেড ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং এপেক্স ফুড ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।