সংযোগ দেয়াকালীন গ্রাহকের কাছ থেকে সিকিউরিটি ডিপোজিট বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে টাকা নেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যেসব অর্থ প্রতিষ্ঠানের তহবিলে বা কাগজে কলমে হিসেব থাকার কথা সেসব অর্থের হিসাব মেলাতে পারেনি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে নানা জটিলতার মুখে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের জুন শেষে সাত ধরনের গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় এক হাজার ৮৪১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা নিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি। যে কারণে ওই তহবিলের স্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শুধু এবারই নয়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওই তহবিলের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু পাঁচ বছরেও এ বিষয়ে হালনাগাদ তালিকা তৈরি হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস সাত ক্যাটেগরিতে গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। প্রতিটি সংযোগ স্থাপনের জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি (সিকিউরিটি ডিপোজিট) হিসেবে নির্ধারিত হারে অর্থ নেয়। সব অর্থ নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি দায় হওয়ার ওই অর্থ ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) হিসেবে রাখা হয়। দেশজুড়ে স্থানীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রায় ২৭ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ওই অর্থ নেওয়া হয়েছে।
এ বছরের জুন শেষে তিতাসের নিরাপত্তা সঞ্চিতি তহবিলে প্রায় এক হাজার ৮৪১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা জমা হয়েছে, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ওই তহবিলের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৫১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক বছরে ওই তহবিলের আকার প্রায় ৩২১ কোটি ৬১ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছরের জুনে শেষ হওয়া নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এক হাজার ৮৪১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিলে থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিতাসের বিভিন্ন জোনাল অফিসে হালনাগাদ কাগজপত্র, গ্রাহকভিত্তিক তালিকা বা বিবরণী ও তথ্য-উপাত্ত না থাকায় যাচাই-বাছাই করে ওই টাকার হিসাব মেলাতে পারেননি নিরীক্ষকরা। যে কারণে এবারও তিতাসের ওই তহবিলের অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও বিষয়টি নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই ওই তহবিল নিয়ে প্রশ্নের মুখে রয়েছে তিতাস গ্যাস।
এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অর্থ) মো. শরীফুর রহমান বলেন, ‘গ্রাহকের নিরাপত্তা তহবিলের অর্থের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, কিংবা নিরীক্ষকরা ওই তহবিলের কাগজপত্র পাচ্ছেন না। বিষয়টি ঠিক এ রকম নয়। আমরা পুরোনো পদ্ধতিতে হিসাব-সংক্রান্ত কাগজপত্র সংরক্ষণ করি। আধুনিকায়নের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আমাদের সিস্টেমে এ-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য না থাকায় নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই করতে পারেনি। অঙ্ক ঠিক আছে কি না তাও মেলাতে পারেনি। এ জটিলতা কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করছি। হালনাগাদ সব তথ্য কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে থাকলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।’
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে মুনাফা কমে আসছে তিতাস গ্যাসে। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা। আগের আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ৫০৬ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ৭২৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে যার পরিমাণ ছিল ৮৮৮ কোটি টাকা।
আনন্দবাজার/ইউএসএস