ঢাকা | বুধবার
৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তেলে আগুন শেয়ারে ধস

ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’

ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’

  • সাত বছর পর তেল ১০০ ডলার
  • বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে ধস

ইউক্রেনে রাশিয়া যে হামলা চালাবে এমন খবর কয়েক মাস ধরেই পশ্চিমা গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসছিল। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তেমন আশঙ্কাকে বার বারই উড়িয়ে দিয়ে আসছিলেন। অবশ্য এক পর্যায়ে তিনি ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুইটি এলাকায় সেনা পাঠানো নির্দেশ দেন। এতে ইউক্রেন সীমান্ত জুড়ে অন্তত দেড় লাখের বেশি সৈন্য মোতায়েন হয়ে যায়। তবে পুতিন বলছিলেন শান্তি রক্ষার জন্যই তিনি সেনা মোতায়েন করেছেন। অনেকেই বলছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের সেটা ছিল প্রথম ধাপ।

তবে সব আশঙ্কা সত্যি করে অবশেষে ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু হয়েছে। এতে ইতোমধ্যে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আগামীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না হলে প্রাণহানি বাড়তেই থাকবে। রাশিয়ার বিরোধী পক্ষগুলো ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ালে আরেক বিশ্বযুদ্ধে যে রূপ নেবে না তা আগে থেকে বলা যায় না। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে প্রবল ধাক্কা লেগেছে। বলা যায় প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ছে তেলের বাজারে।

বিশ্ববাজারে সৌদি আরবের পর অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে রাশিয়া। এটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিকারক দেশও। সে কারণে ইউক্রেনে অভিযানের সঙ্গে সঙ্গেই জ্বালানি তেল জ্বলের বাজারে যেন আগুন ধরে যায়। সেই সঙ্গে শেয়ার বাজারে পতন শুরু হয়। বিবিসি আর আনন্দবাজারের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযানের জেরে সাত বছর পর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম বেড়ে ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের ডোনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়ে পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন ও রুশ বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য। এমন একটা ঘোষণার পরই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

বৃহস্পতিবার ইউরোপে আগাম কেনাবেচায় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের (১৫৯ ব্রিটিশ লিটার) দাম ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ১০২ দশমিক ৩২ ডলারে উঠেছে। এটি ২০১৪ সালের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দাম। এর আগের দিন বুধবার প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৯৯ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারিমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেল ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই তেল ৯৬ ডলার পর্যন্ত উঠে আবার কমেছিল।

এদিকে ইউক্রেনে বিশেষ অভিযানের সূত্র ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে বৈরী দেশ যুক্তরাষ্টসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ক নিম্নগামী হওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে। তৃতীয় দিনের মতো এশিয়ার শেয়ারবাজারে সূচকের ব্যাপক পতন ঘটেছে। এর মধ্যে জাপানের জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের নিক্কেই ২২৫ সূচক ১ দশমিক ৮১ শতাংশ ও হংকংয়ের হেংসেং সূচক ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমেছে।

সূত্রমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযানের পর ইউরোপ-আমেরিকার শেয়ারবাজারে লেনদেনে ভাটা পড়ে। তবে যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ২৫০ সূচক শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসের এইএক্স সূচক শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ, প্যারিসের সিএসি ৪০ সূচক শূন্য দশমিক ১০ এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের ড্যাক্স সূচক শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডাউজোন্স সূচক ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ শতাংশ ৮৪ শতাংশ ও নাসড্যাক ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যানের পূর্বাভাস হচ্ছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১২৫ ডলারে এবং আগামী ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে উঠতে পারে। এর আগে ২০০৮ সালে জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ১৪৭ ডলারে উঠেছিল, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্র ঘোষণার পর সেখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। এরপরই মস্কোর ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসতে শুরু করে পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে।

এর আগে অস্ট্রেলিয়া রাশিয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, তার দেশও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। ব্যাংক, পরিবহন, গ্যাস, তেল ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ের ওপর থাকবে এ নিষেধাজ্ঞা। জাপান সরকারও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়ার ওপর। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ঘোষণা দিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

ইউক্রেনা বিশেষ অভিযানে নড়েচড়ে বসেছে গোটা বিশ্ব। গোটা বিশ্বজুড়েই রাশিয়ার বিপক্ষের শক্তিগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে শুরু করেছে। এতে বিশ্বের তেলের বাজারের সঙ্গে শেয়ারবাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন