ঋণ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে বেসরকারী খাতগুলোতে। গত নভেম্বরে মাত্র ১০.০৪ শতাংশ বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর এটি গত ৭ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বহুদিন ধরেই বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী রয়েছে। তবে বেসরকারিতে হ্রাস পেলেও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সরকারের ব্যাংকঋণ।
চলতি অর্থবছরের চার মাসেই সরকারের ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। এটি সারা অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ধীরে চলো নীতিতে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এর অন্যতম কারণ খেলাপি ঋণের আধিক্য ও তারল্য সংকট। বেশিরভাগ ব্যাংকই শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন বন্ধ করেছে। তাছাড়া উচ্চ সুদসহ আরও কিছু কারণে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারাও ব্যাংকঋণের চাহিদা করছেন কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছর ২০১০-১১ বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৫.৮৪ শতাংশ রেকর্ড হয়েছিল। অর্থবছর ২০১১-১২ এই প্রবৃদ্ধি কমে দাড়াঁয় ১৯.৬৮ শতাংশ। এরপর টানা তিন অর্থবছর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ আরো নাজুক অবস্থায় পৌঁছায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ১০.৮৫ শতাংশ। পরের অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে হয় ১২.২৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা আরো সামান্য বেড়ে দাড়াঁয় ১৩.১৯ শতাংশ। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবাহের গতি অনেকটাই জোরদার হয়। ওই অর্থবছরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬.৭৮ শতাংশ। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই গতি কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে। একই অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১৫.৬৬ শতাংশে। যদিও এর পরের অর্থবছরেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আবার বেড়ে হয় ১৬.৯৪ শতাংশ। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এটি রেকর্ড পরিমাণ হ্রাস পেয়ে ১১.২৯ শতাংশে নেমেছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসেই সরকার ঋণ নিয়েছে ৩৮ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র চার মাসেই সরকার পুরো অর্থবছরের ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়ে নিয়েছে। এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। বাকিটা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ২৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার।
সাধারণত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত নিরুৎসাহী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এতে ব্যাংকের ঋণযোগ্য তহবিল সরকারের কাছে আটকা পড়ে এতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা চাহিদানুযায়ী ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এতে ঋণের সুদহারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য অর্থনীতিবিদরা বরাবরই ব্যাংক থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
উল্লেখ্য, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়। এ অর্থবছরের পুরো সময়ের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২.৫ শতাংশ। আর ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১১.৩ শতাংশ। সূত্র: কালের কন্ঠ
আনন্দবাজার/ইউএসএস