শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইসিটিতে সাতশ জনের চাকরি

প্রতিবন্ধীদের চাকরি মেলা

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। তবে এখন আর বোঝা নয়, অন্য সবার মতো তারাও দেশ গড়ার কারিগর। তারা দেশের জন্য বড় সম্পদ। একটু সুযোগ পেলেই তারাও অবদান রাখতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে। তাদের কথা চিন্তা করে প্রতিবছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজন করে আসছে প্রতিবন্ধীদের চাকরি মেলার। যার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান বাড়ছে প্রতিবন্ধীদের।

চলতি বছর আইসিটিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ৫২ প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধীর। এছাড়াও আরও ৩১০ জনকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এ তালিকা থেকে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে চাকুরির জন্য আহ্বান জানানো হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত আইসিটিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে সাত শতাধিক দক্ষ প্রতিবন্ধীর।

২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে ‘তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এনডিডিসহ সব ধরণের প্রতিবন্ধীর ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত বিসিসি থেকে আইসিটি প্রশিক্ষণ লাভ করেছে মোট এক হাজার ৬৭১ প্রতিবন্ধী। এছাড়া প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে আরো প্রায় দুই হাজার ৭০০ প্রতিবন্ধীকে।

প্রতিবন্ধীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় অবস্থিত এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আইসিটি বিভাগের নেতৃত্বে এবারে আয়োজিত চাকুরি মেলায় এসে চাকুরি পেয়েছে ৫২ প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধী। এছাড়াও এ চাকরি মেলায় কর্মসংস্থানের জন্য আরও ৩১০ জনকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এ তালিকা থেকে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে চাকুরির জন্য আহ্বান জানাবে।

আরও পড়ুনঃ  গাইবান্ধা-৩: মনোনয়নযুদ্ধে মাঠে একাধিক নেতা

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ১০ বছর আগেও অধকিাংশ পরিবারে মনে করা হতো প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা, তবে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ ও প্রযুক্তির কল্যাণে সেই ধারণা অনেক পাল্টে গেছে। এখন আর বোঝা নয়, প্রতিবন্ধীরা অন্য সবার মতই দেশ গড়ার কারিগর। তারা দেশের জন্য বড় সম্পদ। প্রতিবন্ধীদের অক্ষমতা না দেখে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য ব্যক্তির ও সমাজের মনোভাবের পরিবর্তন জরুরি। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরি উভয় জায়গায় তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছি আমরা। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধিতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করছে সরকার।

জুনাইদ আহমেদ পলক আরও বলেন, প্রযুক্তি শুধু স্বাভাবিক মানুষের জন্য নয়, বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের জন্যও। তারই অংশ হিসেবে আমরা ‘এম্পোরিয়া’ নামে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছি। যেখানে মোট ১০ হাজার ৬০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যার মধ্যে থাকবে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ৫৬০, ফ্রিল্যান্সার তৈরী ১০০০ এবং জব ওরিয়েন্টেড ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের আওতায় এক হাজার জন। অনলাইনে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা ভাই-বোনদের তৈরি পণ্য কেনা বেচার জন্য ই-ট্রেডিং পোর্টাল উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের এ কার্যক্রম ১০টি আইসিটি রিসোর্স সেন্টারসহ প্রত্যেক জেলায় এর কার্যক্রম বিস্তৃত হবে। প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে শুধু সরকার নয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতন নাগরিকরা যদি তাদের কাজে লাগাতে পারে তাহলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও চাকরি প্রার্থীদের মাঝে পারস্পরিক সর্ম্পক তৈরি করতেই আমাদের এই চাকরি মেলার আয়োজন। আমরা আশা করি, এই মেলার মাধ্যমে যে সম্পর্ক তৈরি হবে, এতে অধিকাংশ চাকরি প্রার্থীরা চাকরি পাবে। আমাদের মোট ৭টি আঞ্চলিক কার‌্যালয় রয়েছে। যার মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ করে তুলি। ইতোমধ্যে আমরা চার হাজার প্রতিবন্ধীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যার মধ্য থেকে সাত শতাধিকেরে বেশি প্রতিবন্ধী চাকরি পেয়েছে। এছাড়াও এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে প্রতিবন্ধীরা।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়তে দেশের প্রথম সারির আইটি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি এবছরের প্রতিবন্ধীদের ‘চাকরি মেলা ২০২২’ এ অংশগ্রহণ করেছে। এই আয়োজনে প্রতিবন্ধীরা তাদের সিভি জমা দিয়ে নিজেদের বিভিন্ন ফিল্ডের দক্ষতা প্রদর্শন করে চাকরি জোগাড় করতে সক্ষম হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের পাশাপাশি সিনেসিস আইটি নারী বৈষম্য নিয়েও সোচ্চার, যারই ধারাবাহিকতায় তাদের প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৪০ শতাংশ নারী শক্তি।

উল্লেখ্য, সূচনা ফাউন্ডেশন ও সিএসআইডির বিশেষজ্ঞ সহায়তায় বিসিসি প্রতিবন্ধীদের জন্য তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে। এ প্রশিক্ষণ বিসিসি’র মোট সাতটি কেন্দ্রে (ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট ও ফরিদপুর) পরিচালনা করা হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য আইসিটি প্রশিক্ষণসহ চাকুরী মেলা, জাতীয় যুব আইটি প্রতিযোগিতা আয়োজন, আন্তর্জাতিক যুব আইটি প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা প্রদান এবং আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সভা, বিভাগীয় সেমিনার ও স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন