বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোর অন্যতম ‘মৃৎশিল্প’। এটি শুধু শিল্প নয়, আবহমান গ্রামবাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। কালের বিবর্তনে শিল্পটি বিলুপ্তির পথে হারিয়ে গেলেও নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে।
সরেজমিন শেরপুর সদর উপজেলার ভাতাশালা ইউনিয়নের বয়ড়া পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায় মৃৎশিল্পীদের নানান কর্মযজ্ঞ। এসব এলাকায় কয়েক হাজার মৃৎশিল্পী বসবাস করেন। অভাবের সঙ্গে আপোষ না করে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প ভালোবেসে আজও কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
প্রতিদিন কাক-ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুমোর পল্লীতে চলে নারী-পুরুষের কর্মযজ্ঞ। বংশ পরম্পরায় এ পেশাকেই জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পীরা। তারা এ শিল্পেই টিকে থাকার জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
পালপাড়া এলাকার মৃৎশিল্পী রতন পাল বলেন, একসময় বয়ড়া পালপাড়ার কুমারদের সোনালি দিন ছিল। বছরজুড়ে কুমারবাড়ি বা পালপাড়াতে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, খাবার থালা, কলসি, জগ, গ্লাস, গো-খাদ্যের চাড়ি, মুড়ি ভাজার পাতিলসহ নানা আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী তৈরির জমজমাট কর্মযজ্ঞ চলতো। বর্তমানে প্লাস্টিক ও সিলভারের তৈরি তৈজসপত্রের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা সামগ্রী। আরেক মৃৎশিল্পী জিতেন্দ্র পাল বলেন, প্রায় ৬০ বছর আগে ২৫-৩০ জন মৃৎশিল্পী টাঙ্গাইল থেকে শেরপুরের বয়ড়া এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করেন। পর্যায়ক্রমে তাদের ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে আরো শতাধিক পরিবার এখানে এসে মাটির তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে এলাকাটি পালপাড়া নামে পরিচিতি পায়। নারায়ণ পাল নামে একজন বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে আমাদের ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। কারণ সহজলভ্য হওয়ায় ক্রেতারা এখন প্লাস্টিক, স্টিল ও সিলভারের তৈরি জিনিসপত্র বেশি কেনেন। এজন্য মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য সামগ্রীর কদর কমে গেছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) জেলা শাখার কর্মকর্তা আতাউর রহমান ফকির বলেন, মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। যোগাযোগ করলে মৃৎশিল্পীদের এ সুবিধা দেওয়া হবে।