ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্মীপুরের নৈসর্গিক রুপের অলংকার

লক্ষ্মীপুরের নৈসর্গিক রুপের অলংকার

ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব বিবেচনায় দেশের দক্ষিণের জেলা লক্ষ্মীপুর বরাবরই দেশব্যাপী চর্চিত এক নাম। এখানে যেমন রয়েছে ফসলের বিস্তীর্ণ আবাদ ভূমি ঠিক তেমনই রয়েছে অনন্য সব ভ্রমণ কেন্দ্র। মেঘনা বিধৌত জনপদ হওয়ায় এখানকার বহুস্থানে জেগে ওঠা চর আর সৈকতের মতো দেখতে নদী পাড়ের দীর্ঘ রিভার বিচের দৃশ্য অনায়াসেই শীতল করতে সক্ষম পর্যটক হৃদয়। জেলার কমলনগর উপজেলায় রয়েছে এমনই এক মনোমুগ্ধকর রিভার বিচ। মেঘনার এই পাড় মুলত কোনো সৈকত না হলেও কাব্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কোনো অংশেই কোনো সৈকতের চেয়ে কম নয়। জেলা সদরের ঝুমুর মোড় থেকে এই ভ্রমণ স্পটে যেতে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, বেড়ীবাঁধের পাশে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি, বাজার এমনি স্বল্প দুরত্বের সারিবাঁধা দৃষ্টিনন্দন কিছু মসজিদ।

জেলা সদরের জিরো পয়েন্ট থেকে কাঙ্খিত এই নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে প্রথমেই পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১৮কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ। এই দুরত্বের পথ শেষ করতেই দেখা মিলবে বেড়িবাঁধের উপর গড়ে ওঠা ইতিহাস প্রাচীন তোরাবগঞ্জ নামীয় একটি বাজার। এখানেই মুলত মিশে আছে তোরাবগঞ্জ-নাসিরগঞ্জ সংযোগ সড়ক। বাজারের সীমানা পেরিয়ে নদী পাড়ের ছায়াময় বৃত্তে পৌছুতে পাড়ি দিতে হবে আরো প্রায় কিলো দশেক পথ।
খালে নোঙর করা নৌকা আর অনবরত পা ফেলে ছুটোছুটি করা ভেঁড়ার পাল দেখতে দেখতে এই দুরত্ব পার করতেই দেখা মিলবে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর- নাসিরগঞ্জ রিভার বিচ। স্থানীয় পর্যটক মহলে এটি নাসিরগঞ্জ হলেও অনেক পর্যটক এটিকে নারিকেল জিঞ্জিরা হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। অবশ্য এর পেছনেও রয়েছে যথোপযুক্ত কারণ- মেঘনার এই অংশে নদীর পাড় ঘেঁষে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে শতশত নারিকেল গাছ। দ্বীপ না হলেও আবেগ তাড়িত হয়ে পর্যটকরা প্রথম দেখায় এটিকে প্রবালদ্বীপের সাথে তুলনা করে বসেন। জেলেদের সারিবদ্ধ মাছ ধরা নৌকার দেখা মিলবে এখানে। আপন মনে বসে জাল বুনতেও দেখা যায় অনেক জেলেকে। পাড় ঘেঁষে রয়েছে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকানও।

জেলেদের অবসর সময়ে দোকান গুলো পালন করে সামাজিক সম্পর্কের বিশেষ ক্ষেত্র তৈরির ভুমিকা। নাসিরগঞ্জের বেশ কয়েকটি বড় নৌকা মেঘনা পেরিয়ে মাছ ধরতে পাড়ি জমায় বঙ্গোপসাগরে। দশ থেকে ৩০ দিন যাবৎ থাকতে হয় সেখানে। একেকটি নৌকায় লোকবল থাকে অন্তত পনেরো থেকে ৩৫ জন। নাসিরগঞ্জের কিলো কয়েকের মধ্যেই রয়েছে অন্তত তিনটি মাঝারি-বড় আকারের মাছের আড়ৎ। ইলিশ আহরণ মৌসুমে এখানকার আড়ৎগুলো যেমন ফিরে পায় নিজেদের প্রাণ ঠিক তেমনই এখানে ঘুরতে এসে পর্যটকদেরও হয় প্রাণ সঞ্চার।

নাসিরগঞ্জের স্বল্প দুরত্বের রিভার বিচ পায়ে হেঁটে পার করতে লাগবে অন্তত মিনিট পনেরোর দীর্ঘ সময়। হাঁটাহাঁটি কিংবা ছবি তোলার পাশাপাশি এই মেঘনা সৈকতের দৃশ্য উপভোগ করতে গেলে প্রভাতবেলা থেকে সাঁঝের শেষ পর্যন্তও ভরবে না পর্যটক মন। ভ্রমণে আসা পর্যটকরা নিমেষেই হারাবেন নিজেদের মনের নিয়ন্ত্রণ। কেউবা আপন মনে ভাবতে বসে যাবেন- এখানে নিজের একটি বাড়ি থাকলে কতই না হতো ভালো। কেউবা কল্পনার স্বর্গরাজ্যে হারিয়ে সুর-বেসুরে গাইতে শুরু করবেন, এই সাগর পাড়ে আইসা আমার- শিরোনামের চিরচেনা গানটি। কল্পনার ঘোর কাটতেই মনে হবে এটি কোনো সাগর পাড় নয়- লক্ষ্মীপুরের নৈসর্গিক রুপের অলংকার মেঘনার দীর্ঘ রিভার বিচ নাসিরগঞ্জ।

সংবাদটি শেয়ার করুন