দেশের দক্ষিণের জেলা লক্ষ্মীপুরের জেলা সদরে জন্ম জন্মগ্রহণ করেন আলোকিত নারী নাজমুন নাহার। বিশ্ব ভ্রমনের তীব্র ইচ্ছা, চেষ্টা আর ব্যাপক সংগ্রামের মাধ্যমে নিত্য সব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন যে সকল মহীয়সী নারী তাদেরই একজন লক্ষ্মীপুরের ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহার। নিজ জন্ম জনপদের মানুষের কাছে তিনি লক্ষ্মীপুরের ভ্রমণ কন্যা হিসেবে অর্জন করেছেন ব্যাপক পরিচিতি। শুধু তাই নয় লক্ষ্মীপুর ছাপিয়ে তিনি আজ হয়ে উঠেছেন- বাংলাদেশের ভ্রমণ কন্যা।দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে লাল সবুজের পতাকা হাতে নাজমুন নাহার করছেন বিশ্ব ভ্রমণ। এরই মধ্যে লাল সবুজের পতাকা হাতে বিশ্ব মানচিত্রের মাঝে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৬৭টি দেশ ভ্রমণের ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বাংলাদেশের নাজমুন নাহার।
লক্ষ্মীপুরের এই ভ্রমণ কন্যা ১৬৭ তম দেশ হিসেবে সেন্ট লুসিয়া ভ্রমণের মাধ্যমে অর্জন করেন এই গৌরব। আনন্দের বিষয় হলো, সেন্ট লুসিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ জোসেফ পিয়ের এক বিশেষ সাক্ষাতে ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহারকে ১৬৭ দেশে বিশ্ব শান্তির বার্তা ও লাল-সবুজের পতাকা বহনের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তাকে ‘সুপার ব্রেভ গার্ল’ বলে আখ্যায়িত করেন। দেশটির শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা ‘দ্য ভয়েস’ বাংলাদেশের নাজমুন নাহাররের বিশ্ব ভ্রমণ নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ করেছে এক বিশেষ ফিচার গল্প। খ্যাতনামা সাংবাদিক মার্বেলা অ্যান্থনির লেখায় উঠে আসে ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহারের স্বপ্ন, জীবন সংগ্রাম ও বিশ্ব অভিযাত্রার কঠিন থেকে কঠিনতম সব চ্যালেঞ্জের কথা।
লক্ষ্মীপুরের এই ভ্রমণ কন্যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে এভাবেই বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ব দরবারে। চলতি বছরের (২০২৩) মে মাস থেকে নাজমুন নাহার এবারের অভিযাত্রা শুরু করেছেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনাম ও গায়ানা থেকে ক্যারাবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ ত্রিনিবাদ টোবাগো, গ্রেনাডা, সেন্ট ভিন্সেন্ট এন্ড গ্রানাইড, বার্বাডোস ও ১৬৭ তম দেশ হিসেবে সেন্ট লুসিয়া পর্যন্ত। এ বছরের জুলাই মাসের মধ্যভাগ থেকে লক্ষ্মীপুর সহ পুরো দেশ জুড়ো আলোচিত ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহার। তিনি ভ্রমণ করতে চান বিশ্বের প্রতিটি দেশ।
ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে ২০০০ সালে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সূচনা হয় তার প্রথম বিশ্ব ভ্রমণের। নাজমুন নাহার ২০১৮ সালের পহেলা জুন শততম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের উপর।
তিনি ১৫০ তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকা মহাদেশের দেশ সাওতমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি পৃথিবীর এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিভিন্ন জনপদের মাঝে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে। বলা চলে, বিশ্ব দরবারে তিনি এখন লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ভ্রমণ পিপাসু নাজমুন নাহার ভ্রমণ ছাড়াও পরিবেশ রক্ষা ও বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্যে নিয়মিত সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের মাঝে সচেতনতার বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সময় ‘নো ওয়ার অনলি পিস, সেভ দ্য প্ল্যানেট’ এই শান্তি ও ঐক্যের বার্তাগুলো পৌঁছান। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোয় শিশু ও তরুণদেরকে উৎসাহিতও করেন। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন সড়ক পথে। দীর্ঘ ২২ বছরের বিশ্ব অভিযাত্রার মাঝে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন বহু প্রতিকূলতার। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন বহুবার।
শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে লাল সবুজের পতাকা হাতে একের পর এক দেশ ভ্রমণ করে চলছেন তিনি। দীর্ঘ ২২ বছরে বেশ কয়েকবার বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামও হয়েছেন বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরের লক্ষ্মী কন্যা নাজমুন নাহার। বিশ্বের অসংখ্য দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধানসহ বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাকে সংবর্ধিত করেছেন বহুবার। নাজমুন নাহার তার এই বিরল কাজের জন্য তিনি পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা ‘পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়াও দেশ-বিদেশে মোট ৫০টিরও বেশি সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি। সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহার। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এশিয়া বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেও পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের এই ভ্রমণ কন্যা।