প্রচলিত প্রবাদে আছে, ‘যে করে চক্ষু দান, তারেই করো অপমান’। বাক্যটি যেন নিরব কান্নায় প্রতিমুহূর্তে বলছে প্রাকৃতিক বন্ধু গাছ। গাছ আমাদেরকে অক্সিজেন দিচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও রক্ষা করছে বাড়িঘর। বিনিময়ে আমরা গাছকে করছি অত্যাচার, ক্ষত-বিক্ষত। যে যার মতো গাছকে বিজ্ঞাপনের বুথের মতো ব্যবহার করছি। রাস্তার পাশে গাছে লোহার পেরেকে সাটানো হয় হরেকরকম বিজ্ঞাপন। জেলাসদরগুলোতে এমন দৃশ্য যেন চিরচেনা। বগুড়া সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর গাছে এমন চিত্র প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে। একই অবস্থা অন্যান্য উপজেলার বন্দরগুলোতেও। এ সমস্যা নিরসনে উদাসীনতা ছাড়া কারো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বড় বড় লোহার পেরেক ও তারকাটার মাধ্যমে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটিকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করায় ক্ষুব্ধ সচেতন সমাজ সমাজ।
সরেজমিন দেখা যায়, বগুড়ার সবগুলো সড়কের পাশে গাছে পেরেক ঢুকিয়ে রাজনৈতিক ব্যানার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, বাড়ি ভাড়া, ডেকোরেটর, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডাক্তারসহ নামে-বেনামে বিজ্ঞাপন লাগানো হয়েছে। ছোট, বড় ও মাঝারি সব গাছেই বিজ্ঞাপন। যেন প্রাতিষ্ঠানিক পণ্যের প্রচারণার অন্যতম মাধ্যম এখন গাছ। শুধুই কি তাই? কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তি বিভিন্ন শব্দ/দোয়া লিখে লেমিনেটিং করে লাগাতর সড়কের পাশের গাছগুলোতে পেরেক দিয়ে আটকিয়ে রাখে। আশপাশ ঘেঁষে গজিয়ে ওঠা গাছগুলোও রক্ষা পায়নি এ নির্মম অত্যাচার থেকে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘মানুষের মত গাছের প্রাণ আছে, তাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেড়ে উঠতে হয়। কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নেয়ায় গাছে গাছে বড় বড় পেরেক দিয়ে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলিয়ে পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে। তাছাড়া গাছে পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয় তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অণুজীব প্রবেশ করে ওই জায়গায় পচন ধরে। ফলে গাছের খাদ্য ও পানিশোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। একসময় গাছটি মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে পরিবেশের ভারসাম্র হুমকির মুখে পড়ে। এক্ষেত্রে আমাদের সকলের সচেতন হওয়া উচিত।’
বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া বন্দর ব্যবসায়ী নাজমুল হক জানান, মানুষের শরীরে ছোট কাঁটা বিঁধলে যেমন যন্ত্রণা হয়, তেমনি গাছও অনেক কষ্ট পায় তার গায়ে লোহা ঢুকলে। এছাড়া গাছে লোহা ঢুকানোর ফলে রাস্তার পাশের গাছগুলো বরাবরই নামমাত্র দামে বিক্রয় করতে হয়। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
জগৎজোড়া বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের প্রাণ আবিষ্কার করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। প্রাণীদের মতো উদ্ভিদও আঘাত পেলে কষ্ট পায়- তা তিনি উপলদ্ধি করেছেন। পেরেক ঠুকে গাছে বিজ্ঞাপন লাগানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। শুধু কি গাছ আর পরিবেশেরই ক্ষতি হচ্ছে? রাস্তার পাশের এসব গাছ বিক্রির পর যখন ছ’মিলে নেওয়া হয়, কাঠ কাটার সময় লোহার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দামি সব যন্ত্রাংশ। আহত হোন ছ’মিল শ্রমিকও।
বন অধিদপ্তর বগুড়ার সামাজিক বন বিভাগীয় কর্মকর্তা ডক্টর আব্দুল আওয়াল বলেন, গাছে পেরেক ঢুকিয়ে সাইনবোর্ড টাঙানো অন্যায়। তবে এধরণের প্রবণতা বগুড়ায় খুব বেশি নেই। আমরা এধরণের কাজে জড়িতদের প্রথমে নিষেধ করি এরপর সেগুলো সরানোর ব্যবস্থা করি এবং এরপর সর্বশেষ মামলা করা হয়। বন অধিদপ্তরের অভিযান অব্যহত রয়েছে।