তালগাছের আঁশ থেকে তৈরী আসবাবপত্র গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি অংশ। যেমন সৌখিন, তেমনই দৃষ্টিনন্দন এসব পণ্য। বগুড়ার কাহালুতে এখনো টিকে আছে ঐতিহ্য। তাল গাছের আঁশ থেকে হস্তশিল্পে তৈরী বিভিন্ন পণ্য যাচ্ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ হস্তশিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে অসংখ্য পরিবারের। বছরে প্রায় লাখ টাকা আয় করছে পরিবারগুলো।
বছরজুড়ে উপজেলার পাইকড় ও কালাই ইউনিয়নের প্রায় ৫শ’ লোককে এ হস্তশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত দেখা যায়।
তালগাছের আঁশ থেকে প্রায় ৩শ ধরণের পণ্য তৈরী করেন তারা। বিশেষ মাথার টুপি, ঝুড়ি ব্যাগ, অলম্যাট, টেবিল ম্যাট, ময়লার ঝুড়ি, ফুলদানী, ডিমের খাচি, পানদানী বেশি তৈরী করে থাকেন।
পাঁচখুর গ্রামের আছিয়া বিবি জানান, ৫ বছর যাবৎ উদ্যোক্তা হিসাবে স্বামী সাবান আলীকে নিয়ে তিনি এ পেশায় জড়িত। স্বামী তাকে তাল পাতার গোড়ালীর অংশ (স্থানীয় ভাষায় তালের ঢেইঙ্গা) থেকে বিশেষ ধরনের আঁশ ছড়ানো কাজে সহযোগীতা করেন। গত একবছরে আয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ উপার্জন থেকে এক মেয়েকে কলেজে পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন, ছেলের লেখাপড়া খরচও বহন করছেন।
বিভিন্ন কোম্পানী এ এলাকার লোকজনের মাধ্যমে তালগাছের আশের পণ্য তৈরী করিয়ে নেয়। নির্দিষ্ট সময়ে ডেলিভারী নিয়ে কোম্পানী থেকে দেশ-বিদেশে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। আছিয়ার স্বামী সাবান আলী বলেন, ‘একটি কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করে আমার ৪ সদস্যের পরিবার পরিচালনা করছি। এছাড়া পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করতে পারছি।
বছরজুড়ে হস্তশিল্পের এসব পণ্যের চাহিদা থাকলেও বাংলা সনের আশ্বিন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে। এসময় উদ্যোক্তা/কর্মীদের পরিশ্রমও বেশি হয়। এ অঞ্চলের প্রায় ৪শ’ পরিবারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তবে পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক কম পান বলে হতাশার ছাপ অনেকের মাঝে। পাইকড়ের কারিগর মেঘনা বেগম বলেন, ‘হস্তশিল্পের আসবাবপত্র তৈরি করতে যে পরিশ্রম হয় সে তুলনায় মূল্য অনেক কম পাই। এ টাকায় সংসারে টানাপোড়েন হয়। এরপরও ভালো লাগা আর অভ্যস্ততার কারণে, এ পেশা ছাড়তে পারছি না।
তালগাছের আঁশ থেকে তৈরি আসবাবপত্রের চাহিদা দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত। হস্তশিল্পের নান্দনিক কারুকার্য পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। এছাড়া গ্রামগঞ্জেও বেশ সৌখিনতার সঙ্গে এসব পণ্য প্রচলন রয়েছে। বিক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন জানান, তিনি নিজে পণ্য তৈরী করেন এবং আরও কিছু অতিরিক্ত ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বিক্রয় করেন। এ পেশায় বেশ স্বাছন্দেই সংসার পরিচালনা করেন তিনি।
কুশলীহার গ্রামের ক্রেতা কহিনুর বেগম বলেন, তালগাছের আঁশের তৈরী আসবাবপত্র দামে সাশ্রয়ী, দীর্ঘ স্থায়ী ও টেকসই হয়। একারণে দীর্ঘদিন হাতে তৈরী এসব পাখা, ঝুড়ি, ফুলদানি ব্যবহার করি। তবে আগের তুলনায় খুব কমই জায়গাতেই এগুলো কিনতে পাওয়া যায়।
হস্তশিল্পের চাহিদা দেশ ও দেশের বাহিরে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, সরকারি বা বেসরকারি এনজিও’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে ও অর্থ সহযোগীতা প্রয়োজন। তাহলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প উজ্জীবিত ও সম্প্রসারিত হবে। এছাড়া নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বেকার সমস্যা নিরসন ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে এ হস্তশিল্প।