সোমবার, ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওয়েব সিরিজগুলোতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়ে সমালোচনার ঝড়

দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে চলছে ওয়েব সিরিজের হিরিক। আর এসব সিরিজে নায়ক-নায়িকাদের ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। কোন সেন্সর না থাকায় বিভিন্ন ওয়েব সিরিজে অসংলগ্ন গল্প, অশালীন দৃশ্য, নোংরা সংলাপ ব্যবহার হয়ে উঠেছে সাধারণ বিষয়।

গল্পের প্রয়োজনে কোথাও গালি ব্যবহার করা হলেও টিভি নাটকের ক্ষেত্রে সেই শব্দটুকু মুছে দেওয়া হয়। মাদকদ্রব্য ব্যবহার ও সেবন করার দৃশ্যের ক্ষেত্রে ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ লেখা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজে এ ধরনের সচেতনতা মূলক লেখা লক্ষ্য করা যায়নি।

সম্প্রতি কয়েকটি ওয়েব সিরিজ সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় তুলেছে। স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি মুক্তি পেয়েছে ইউটিউবে।

গত ২৭ মে বিঞ্জ এ মুক্তি পেয়েছে ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে’ শিহাব শাহীন পরিচালিত ক্রাইম থ্রিলার ‘আগস্ট ১৪’। এই সিরিজে তুশি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাসনুভা তিশা। আরও অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনিরা মিঠু, শাওন, তানভীর প্রমুখ। সিরিজে দেখা যায়, বন্ধুদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, বাসায় একা নীল ছবি দেখার মুহূর্তসহ নানা দৃশ্য। থ্রিলারের শুরুতেই বলে নেওয়া হয়, এটি ১৮ বছরের কম বয়সী দর্শকের জন্য নয়।

এই সিরিজে অভিনয় প্রসঙ্গে তাসনুভা তিশা বলেন, ওখানে গল্পের বাইরে কিছু ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব ডিসেন্টলি কাজ করতে, তার চেয়েও কম এক্সপোজড করতে। দৃশ্যগুলো যেন দর্শকের ভালো লাগার মনে না হয়। অসংলগ্নতা হয়তো কিছুটা ছিল। ভাষার ব্যবহার বা অন্য যাই বলি, সেগুলো চরিত্রের জন্য করতে হয়েছে, যা আমি নরমালি নাটকের জন্য কখনো করি না।

আরও পড়ুনঃ  সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ আসামির যাবজ্জীবন, খালাস ৬

শ্যামল মওলা-মৌটুসী, আদনান ফারুক হিল্লোল-নাজিয়া হক অর্ষা, ইমি-আবু হুরায়রা তানভীর অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘বুমেরাং’ মুক্তি পেয়েছে ঈদে। এটি নির্মাণ করেছেন সিনিয়র নির্মাতা ওয়াহিদ তারেক। সিরিজের শুরুটাই চমকে দেবে দর্শককে। পর্দায় বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পীদের এত নিবিড় বিছানার দৃশ্য এর আগে কখনো দেখানো হয়েছে কিনা, তা নিয়েও ভাবাবে। ‘বুমেরাং’ সিরিজের অন্য একটি পর্বে অভিনয় করেছেন মৌটুসী বিশ্বাস, শ্যামল মওলা, ইমিসহ আরও অনেকেই। এই গল্পটি সাজানো হয়েছে এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার নিয়ে। এতে বেশ কয়েকটি চুমু ও যৌন দৃশ্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস বলেন, অনেকে বলছেন, আমাদের নাটক ধ্বংস হয়ে যাবে! তাদের আমি বলছি, এটি নাটক নয়, একটি ওয়েব সিরিজ। শুধু তা-ই নয়, এটি ইউটিউবের মতো ওপেন প্লাটফর্মে প্রকাশিত হওয়ার কথাও ছিল না। একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে সাবস্ক্রাইবেশন ফি দিয়ে দেখতে হবে এটা বলা হয়েছিল। আমরা যে কাজটি করেছি তার গল্প যেদিকে গেছে, সেভাবে শুধু অভিনয়টুকু করেছি।

সুমন আনোয়ার পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘সদরঘাটের টাইগার’। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ছোট পর্দার অভিনেতা শ্যামল মওলা। তার বিপরীতে লাইলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারহানা হামিদ। এই ওয়েব সিরিজের অধিকাংশ সংলাপে একাধিকবার অশালীন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু শব্দগুলো মুছে দেওয়া হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ প্রসঙ্গে শ্যামল মওলা বলেন, এই ওয়েব সিরিজের রেসপন্স বেশ ভালো! বাংলাদেশে এই বাজেটের এই লেভেলের ওয়েব সিরিজ করা সাহসের ব্যাপার! সমালোচনা তো থাকবেই! নতুন কিছু যখন হয় তখন কেউ খুশি হবেন, কেউ অখুশি হবেন- এটাই তো স্বাভাবিক।

আরও পড়ুনঃ  আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন আতাউর রহমান

নির্মাতা ও প্রযোজকরা মনে করেন, দর্শকদের অনলাইন প্লাটফর্মমুখী করতেই বিদেশি ওয়েব সিরিজের অনুকরণে কনটেন্ট নির্মাণ করতে চাইছেন দেশি নির্মাতারা। সে ক্ষেত্রে তারা এরকম কিছু দৃশ্য জুড়ে দিচ্ছেন। এসব ওয়েব সিরিজের বাজেট নাটকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়ে থাকে। সে কারণে অভিনয়শিল্পীদের আগ্রহও থাকে বেশি। প্রযোজকদের আগাম শর্ত মেনে চুক্তি করেই কলাকুশলীরা যুক্ত হন এসব সিরিজে।

টিভি প্রযোজক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজু মনতাসির বলেন, আমরা শুনেছি, নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের বাইরের কিছু প্রযোজক শিল্প-সংস্কৃতির তোয়াক্কা না করে এমন কাজ করছেন। এসব ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আমরা শিল্পী এবং নির্মাতাদের নৈতিকভাবে সৎ থাকতে অনুরোধ করতে পারি।

 

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন