ঢাকা | বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোন পথে শাবির আন্দোলন

কোন পথে শাবির আন্দোলন

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দফার আন্দোলন ছোট হয়ে আসে একদফায়। যে আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শাবি ক্যাম্পাস; পরিবেশ হয় ঘোলাটে। টানা ৮ দিন ধরে আন্দোলনটি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনটি দু-একদিন পরপর নতুন মোড় নেয়। আন্দোলনকারীর ২৪ জন এক দফার দাবি নিয়ে আমরণ অনশনে নামেন গত বুধবার বিকেলে। অনশন করতে গিয়ে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের দাবি একটাই, শাবি ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন তারা।

এদিকে সিলেটের বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আমাদের সন্তানেরা উন্মুক্ত আকাশের নীচে অনশন করছে। অভুক্ত অবস্থায় রেখে আমরা সুখনিদ্রায় যেতে পারি না। বিষয়টির সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। এই অচলাবস্থার অবসান দেখতে চান তারা। বিষয়টি নিয়ে সিলেটের সচেতন মহল উদ্বিগ্ন।

এ আন্দোলন শুরু হয় গত ১৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে। শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল তিন দফা। এরপর শনিবারও সেই আন্দোলন চলে। আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেন আন্দোলনকারীরা।

পরদিন রোববারও চলে আন্দোলন। তখন একটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীই নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়েন সে আন্দোলনে। সেদিন ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এরপর শুরু হয় পুলিশি হস্তক্ষেপ। লাঠিচার্জ টিয়ারসেল ছোঁড়ার পাশাপাশি গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। তিনদফার আন্দোলন ছোট হয়ে আসে একদফায়। ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে ফুঁসে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। সেদিন রাতেই জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হয়। পরদিন সোমবার দুপুরের মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে আন্দোলন আরও তীব্র করে তুলেন। আন্দোলনকারীরা ভিসির বাসভবন ঘেরাও করেন।

এদিকে মঙ্গলবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিয়ে শাবি ক্যাম্পাসে যান। তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, ভিসি এবং শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দকে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন।

ওই দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নাদেল জানিয়েছিলেন, তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শাবিতে আসেন। তিনি দল এবং সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা করে কিছু সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। ভিসি এবং শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আলোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। একপর্যায়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলশি কুমার দাশ আন্দোলনকারীদের কাছে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে যান। কিন্তু তাও প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

রাতেই তারা ঘোষণা দেন বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে ভিসি পদত্যাগ না করলে তারা আমরণ অনশনে বসবেন। হুশিয়ার অনাযায়ী বুধবার বিকেল ৩টা থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৪ জন আমরণ অনশন শুরু করেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের অশালীন মন্তব্য ও স্লোগানের বিরুদ্ধে শাবির কয়েকজন শিক্ষক বুধবার সকালে প্রধান ফটকে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হন।

বুধবার রাত ৯টার পর শাবির ৬ জন ডিন, কয়েকজন প্রক্টর, সব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং অন্যান্য শিক্ষকরা হাজির হন আন্দোলনকারীদের সামনে। তারা তাদের অনশন ভেঙে আলোচনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সে প্রস্তাবও প্রত্যাখান করে অব্যাহত রাখে ভিসিবিরোধী আন্দোলন।

এদিকে, অনশনকারীদের মধ্য থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই অনশনকারীরা অসুস্থ হতে শুরু করেন। একেকজন করে মোট ১০ জনকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এ ছাড়া বাকি অনশনকারীদের শরীরে স্যালাইন পুশ করা হচ্ছে। অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ অবস্থায় শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কোন পথে মোড় নেবে, তা নিয়ে এখন শঙ্কিত সচেতন সিলেটবাসী।

আন্দোলনকারী এবং তাদের সমর্থকদের দাবি, মেয়েদের সামান্য কয়েকটা দাবি ছিল। সেই দাবিগুলোকে পাশ কাটিয়ে প্রভোস্ট যে ভুল করেছিলেন, সেরকম ভুল একের পর এক করেই যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, গুলি ছোঁড়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপের কারণে পাল্টে যায় আন্দোলনের গতিপথ। পুলিশ অজ্ঞাত ২০০-৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।

সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেট’র সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, যে দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন এটা খুবই ক্ষুদ্র। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা প্রথমেই মেনে নিলে অন্তত শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠতো না। এ নিয়ে সিলেটের নাগরিক সমাজ খুবই উদ্বিগ্ন। তাই যতো দ্রুত সম্ভব এর সুন্দর সমাধান হওয়া উচিত।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন