ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল ডিভাইড ঘোচাতে এক অভূতপূর্ব উদ্যোগ হাবিপ্রবি শিক্ষকের

ডিজিটাল ডিভাইডকে সাধারণত ডিজিটাল বিভাজন বলা হয়ে থাকে। এটি দ্বারা যারা ডিজিটাল যুগ থেকে উপকৃত হয় এবং যারা ডিজিটাল যুগ থেকে উপকৃত হয়না তাদের মধ্যে থাকা ব্যবধানকে বোঝায়। করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে উত্তরের জনপদ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবির) ডিজিটাল ডিভাইড ঘোচাতে সহকারী অধ্যাপক মোঃ জুয়েল আহমেদ সরকারের উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন ও সার্টিফিকেট অর্জন করে। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মোঃ রুবাইয়াদ ইসলাম।

অধ্যাপক মোঃ জুয়েল আহমেদ সরকারের কাছে তার এই অভূতপূর্ব উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণা আমরা কেবল বুঝতে শুরু করেছি এবং এর মধ্যেই অনেক শিল্পোন্নত দেশে চলছে পঞ্চম শিল্পবিপ্লব নিয়ে প্রস্তুতি। প্রযুক্তির পরিবর্তনের দ্রুত গতির সাথে সাথে আমাদের কর্মবাজার সহ উন্নয়নের বিভিন্ন দিক ব্যাপক পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতায় পিছিয়ে থাকলে তৈরি হতে পারে ডিজিটাল ডিভাইড। এগিয়ে থাকতে তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তির সর্বশেষ দক্ষতাগুলো থাকতে হবে নখদর্পণে। বিশ্বব্যাপী এই দক্ষতাগুলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ অপেন লানিং সোসাইটি‘র মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ ভালো কিছু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। আমি শুধু ওইগুলোর সাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছি। আর উত্তরের জনপদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান ছড়ানোর বাতিঘর হলো হাবিপ্রবি। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত বৈষম্য (ডিজিটাল ডিভাইড) কমানোর ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দারুণ কিছু করে দেখাতে পারে।”

তিনি আরো জানান, “করোনার আগে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই অনলাইন কোর্সের ব্যাপারটা এতো পরিচিত ছিলো না। অধিকন্তু, উত্তরবঙ্গে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের ইন্টারনেট চালানোয় তেমন দক্ষতা নাই।”

শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন দুনিয়ার উন্মুক্ত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রথমে ব্যাপারটা ছিলো খুব কঠিন। অনলাইনে কোর্স কি? আর এটি কিভাবে করা যায় এবং এই কোর্সগুলো কি কাজে লাগতে পারে; এটা বুঝাতেই অনেক সময় লেগেছে। করোনা মহামারী চলাকালীন সময়টাতে প্রায় সারাদিন এবং কোন কোন সময় রাত জেগে অনলাইনে থাকতে হয়েছে আমাকে। ফেইসবুক লাইভ, ওয়ার্কশপের মতো নানা ধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্মুক্ত শিক্ষার বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদেরকে বোঝাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন লার্নিং বিষয়েও বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে হয়েছে। এই পুরো কাজটি আমার পক্ষে একা করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিলো না। আমি আমার সহকর্মীদের সহায়তা পেয়েছি এবং পাশাপাশি হাবিপ্রবির একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী পুরো ব্যাপারটিতে দারুণভাবে আমাকে সহায়তা দিয়েছে। এমনও হয়েছে কোর্সে অন্তর্ভুক্তির শেষ তারিখে আমরা সারারাত জেগে অনলাইনে থেকে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছি। তবে এত কষ্টের পরেও আমি দারুণ খুশি। একটা সুযোগ পেলে যে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক কিছুই করে দেখাতে পারে এই সময়টাতে বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি।”

অধ্যাপক মোঃ জুয়েল আহমেদ তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান, “প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আমাদের সামনে অবারিত সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এবং এর জন্য প্রয়োজন প্রতিনিয়তই শেখা; যেটাকে লাইফ লং লার্নিং বলা হয়ে থাকে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি উন্মুক্ত শিক্ষার প্ল্যাটফর্মগুলোর বিকল্প নাই। আমার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী; বিশেষত প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরকে এই সুযোগগুলোর সাথে বেশি করে সম্পৃক্ত করা।”

উল্লেখ্য, করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে যখন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল এবং অনেক শিক্ষার্থীই মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল; তখন এই দুঃসময়কে কাজে লাগিয়েছিলো হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। তারা এই সময়ে প্রায় ১০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ৪০ হাজারেরও বেশি অনলাইন কোর্সে ভর্তি হয়েছে এবং ৭০ হাজারের মত পাঠ শেষ করেছে ৫০ হাজার ঘন্টারও বেশি পড়াশোনা করে। আর এই পুরো ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ জুয়েল আহমেদ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা ও ঐকান্তিক চেষ্টার মাধ্যমে।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন