ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে চেচুয়া বিলের অবস্থান। অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ বিলে ফুটেছে লাল শাপলা, চারিদিকে পাখির কলরব।
বিলের এপাশ থেকে ওপাশ শুধু চোখ জুড়ানো লাল শাপলার সমারোহ। এ যেন রক্তিম নান্দনিকতার মনোলোভা রূপ। সকালে উদিত সূর্যের আভায় ফুটন্ত লাল শাপলা ও পড়ন্ত বিকেলে সূযাস্তের দৃশ্য মুহুর্তে যে কারো মন কাড়ে। এমন সৌন্দয্য বিরাজ করছে ত্রিশালের চেচুয়া বিলে।
প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তীর্ণ বিলটি। মাঝে মাঝে সাদা ও বেগুনি শাপলার দেখাও মেলে। এর সঙ্গে ভাসমান কচু ফুলের সাদা আভা এখানকার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। ভ্রমণ পিপাসুরা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে ভিড় জমাচ্ছে। শিশির ভেজা সকালে জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরংয়ের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
দেশের মানুষের কাছে ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নের এ বিলটি একটি গুজবকে কেন্দ্র করে বেশ পরিচিত। একদিন রাত পেরিয়ে সকাল হতেই কিছু লোক দেখতে পায় সেখানে থাকা জমাটবাঁধা কচু হঠাৎ সরেগিয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়েছে। এটাকে অলৌকিক ভেবে কয়েকজন এখানে গোসল করে ও এর পানি খেয়ে রোগ থেকে মুক্ত হয়েছে বলে জানান। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর সারাদেশের হাজারো মানুষ বন্ধুর পথ পেরিয়ে কাঁদা মাখা পানিতে গোসল, গড়াগড়ি ও কাঁদাযুক্ত পানি সংগ্রহ করতে এখানে ভিড় করে। এমন গুজবও ছড়ানো হয়েছিল যে, হাজারো সমস্যার একমাত্র সমাধান এ চেচুয়া বিল। বিলের পানিতে এক ডুবেই সেরে যাবে যেকোনো রোগ। এখানকার মাটি ও পানি নাকি সর্বরোগের ওষুধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিতে ছড়ানো গুজবে হাজারো মানুষের তথাকথিত তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছিল ময়মনসিংহের এ চেচুয়া বিল।
দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে আসা যায় চেচুয় বিলে। যাতায়াতের সুবিধাও ভালো। বাস কিংবা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে এ বিলে আসা যায়। ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বালিপাড়া রোডে অটো কিংবা ভ্যানে করে ঠাকুরবাড়ি মোড়ে এসে নামতে হবে। ভাড়া ১০ টাকা। এরপর চেচুয়া বিল পর্যন্ত ভ্যান কিংবা হেঁটেও যাওয়া যায়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে শিক্ষার্থী হুমায়রা আক্তার লাকি বলেন, প্রকৃতিতে নিজের রূপ বৈচিত্র অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে জলাভূমি ও বিলে ফুটে থাকা এ জলজ ফুলের রাণী। শাপলা ফুলের উপস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরেছে গ্রামের শিশুদের উচ্ছল মাখা শৈশব। লাল শাপলা যেন রঙের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে পুরো বিলজুড়ে।
সৌন্দর্য রক্ষায় এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে এ বিলে ফুল তোলে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘুরতে আসা মানুষকে এলাকাবাসী সহযোগিতা করছে। দর্শনার্থীদের নিয়মানুবর্তিতায় হয়তো এভাবেই বিলটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
আনন্দবাজার/শহক