ঢাকা | রবিবার
১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্যরকম পহেলা বৈশাখ

“বাজে রে বাজে ঢোল আর ঢাক , এলো রে পহেলা বৈশাখ,,,
বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখ। এই মাসটিকে নিয়ে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে যেন মিশে আছে ভিন্ন ছোঁয়া। গান, আড্ডা , নতুন সাজ,বাহারি খাবারের আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই বুঝি এসেছে বৈশাখ। কিন্তু এই বছর করোনা ভাইরাস ও পবিত্র মাহে রমজানের আগমনে অন্যরকম এক পহেলা বৈশাখ পালন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নাগরদূলার বুক ধক ধক, পান্তা ইলিশের চিরচেনা লেনাদেনা, মেলার ধুমছে পড়া ভীড় সবই থাকবে এবার বাকির খাতায়। অন্যরকম এই পহেলা বৈশাখ নিয়ে কি ভাবছেন তরুণ শিক্ষার্থীরা তা জানাচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আশিকুর রহমান।

‘নববর্ষ মানে নতুন বছর। পুরনো বছরকে ভুলে সাদরে গ্রহণের পালা নতুনকে। পূর্বের বছরের সব দুঃখ বেদনা ভুলে নতুন বছরের প্রতিটি সকাল যেন আনন্দের হয় তেমনই আশা করি আমরা সবাই। ইতিহাস থেকে জেনেছি মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। এরপর ১৫৮৪ সাল থেকে বাংলা সনের প্রচলন শুরু হয়। এ বছরও নববর্ষের সূর্য উঠেছে। কিন্তু লাল-সাদা শাড়ি বা জামা পরে ঘর থেকে বাইরে বেড়ানোর তাড়া নেই কারোর। রাজপথগুলো জনবিরল। রমনার বটমূলে হবে না ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী প্রভাতি গানের অনুষ্ঠান। বিশ্ব ঐতিহ্যের খ্যাতি পাওয়া বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাও শুরু হবে না চারুকলার সামনে থেকে। বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে বসবে না কারুপণ্যের মেলা। বাংলা দিনপঞ্জিকায় ১৪২৮ যেন নতুন এক নববর্ষের উদযাপন করবে দেশ। তবুও দিনশেষে হাজার আক্ষেপের পরে চাওয়া একটিই সুস্থ হও পৃথিবী, ফিরে যেন পাই স্বাভাবিক জীবন।’

মো.গোলাম রব্বানী
তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগ,
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(চুয়েট)

‘বছর ঘুরে প্রতিবারের মতো এসেছে বাঙালির মহা আনন্দোৎসব পহেলা বৈশাখ। তবে প্রতিবারের থেকে এবারের পহেলা বৈশাখ উৎযাপনে থাকবে চোখে পড়ার মতো ভিন্নতা। কেননা, করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে বাংলাদেশ এখনো মুক্ত হতে তো পারেই নি বরং প্রায় প্রতিদিনই করোনা গড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ আবারো কঠোর লকডাউনের পথে। তাই এবারের উৎসব হওয়া চাই সামাজিক দূরত্ব মেনে, কিছুটা ঘরোয়া পরিসরে। করোনা কে এড়িয়ে জীবন রক্ষার এটাই যে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জনসমাগম এড়িয়ে চলা সহ নতুন নতুন পরামর্শ আসছে প্রতিনিয়ত। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। আামাদের সকলের উচিৎ সরকারের নিদের্শনা মেনে পহেলা বৈশাখ উৎযাপন করা। তাই সামাজিক দূরত্ব মেনে দূর থেকে বাঙালির সাংস্কৃতি আর মানুষকে ভালোবাসুন। বৈশাখ এর শুভেচ্ছা ভার্চুয়ালি ছড়িয়ে দিন বন্ধু বান্ধব আর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে। আশা করি সব খারাপ স্মৃতি ভূলে নতুন বছর সবার জীবনে নিয়ে আনবে অনেক হাসি -আনন্দ, সুখ- শান্তি ও সমৃদ্ধি।

উম্মে সালমা উর্মি
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ
গণ বিশ্ববিদ্যালয়

‘একাত্তর থেকে একুশ, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে একটি নতুন বৈশাখ পালন করার স্বপ্ন দেখেছিলো দেশ। কিন্তু গতবারের ন্যায় এবারও পহেলা বৈশাখ উৎসব পালন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীতে এক অন্যরকম বৈশাখ পালনের পরিকল্পনা ছিলো। ইচ্ছা ছিলো বন্ধুদের নিয়ে ঘুরবো, গাইবো ও একসাথে খাওয়া-দাওয়া করবো। তবে তা এখন ঘরে বসেই করতে হবে। বৈশাখে বাংলার সকল বিভেদ দূর হয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা এবং পৃথিবী থেকে মহামারী করোনা মুছে যাক এই কামনা করি।’

ওয়াজহাতুল ইসলাম
লোকপ্রশাসন বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

‘এবারের পহেলা বৈশাখ সত্যিই বেশ ব্যতিক্রমধর্মী হবে। কেননা প্রথমত পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত লকডাউন। একজন মুসলিম হিসেবে তাই রোজা রাখাটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। তাছাড়া আমার কাছে নববর্ষ মানে শুধুমাত্র সকালে উঠে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বা লকডাউন উপেক্ষা করে ঘুরতে যাওয়া নয়। আমার কাছে নববর্ষ মানে দেশপ্রেম। নববর্ষ মানে আবেগ। আর সেই আবেগের জায়গাটা এতটুকুও কমবে না। তাই আমার পরিকল্পনা এবারের নববর্ষ আমি ঘরে বসেই পালন করবো। আর তা হবে অনলাইনে সকলকে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে, সকলকে ঘরে বসেই নববর্ষে পালনের বিষয়ে উৎসাহিত করে। আর অবশ্যই আল্লাহর কাছে এই দোয়া করে যেন এই নতুন বর্ষের হাত ধরে আমাদের পৃথিবী যেন আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে ওঠে।’

ফারিয়া জাহান,
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

 

সংবাদটি শেয়ার করুন