শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাশিয়া সরকার ৬৫ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা বৃত্তি দিবে

আগামী শিক্ষাবর্ষে রাশিয়া সরকার ৬৫ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দিবে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাস্থ রুশ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক ম্যাক্সিম দোব্রোখোতভ এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে চলতি বছরের প্রধান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাতে এই আয়োজন করেছেন।

ম্যাক্সিম দোব্রোখোতভ ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন বাংলাদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ঐতিহ্যগতভাবে দৃঢ় সম্পর্কের উপর জোর দিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই বছর রাশিয়া মহান দেশপ্রেমিক যুদ্ধে বিজয়ের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। এই উপলক্ষে ঢাকার রুশ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এই ঐতিহাসিক তারিখের পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় চিহ্নিত করার জন্য অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক অনলাইন অনুষ্ঠান, যেমন ‘অমর রেজিমেন্ট’, ডকুমেন্টারি এবং ফিচার ফিল্মস শো এবং অনলাইন সভার আয়োজন করে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাশিয়া ভ্রমণের ৯০তম বার্ষিকী যা রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে ভবিষ্যতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এক ধরনের আগমনী ইঙ্গিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তিনি উল্লেখ করেন, রুশ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রাশিয়ান সরকারি বৃত্তি কর্মসূচির জন্য প্রার্থী বাছাইসহ শিক্ষামূলক ক্রিয়াকলাপগুলিতে মনোনিবেশ করে এবং যোগ করেছে যে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে রাশিয়ান সরকার স্নাতক, মাস্টার্স এবং পিএইচডিতে মোট ৬৫টি বৃত্তি প্রদান করেছে। আগামী বছরও এই বৃত্তি অব্যাহত থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন, বৃত্তির বাইরেও প্রতি বছর কয়েক শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক রাশিয়াকে উচ্চশিক্ষার স্থান হিসাবে বেছে নেয়।
তিনি বলেছিলেন যে বাংলাদেশে রাশিয়ান ভাষা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে যার ফলে এই বছর রাশিয়ান ভাষা কোর্সে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শিক্ষা বিভাগের প্রধানগণ যথাক্রমে প্রশান্ত কুমার বর্মন এবং সৈয়দ বজলুল হাসান রাজিব বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন এবং তারা বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দেন।

আরও পড়ুনঃ  দুই মেডিকেল কলেজের নিবন্ধন বাতিল, চারটির ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত

রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষা
বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া। যেখানে শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান চিকিৎসা সভ্যতা ও সাংস্কৃতির বিশাল ভান্ডার রয়েছে। বিশ্বের হাজারো ভাষার দেশে শিক্ষা ও প্রযুক্তিক উন্নয়নে রাশিয়াকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে এগুতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তির পর থেকে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার্থে রাশিয়াতে যায়। এখনো প্রতি বছরই বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অংশ নিচ্ছে। কারণ রাশিয়ায় পড়াশোনার মান বিশ্ব স্বীকৃত। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ২০২০ সালে ও রুশ সরকার রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬৫ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দিতে সক্ষম হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে অনলাইন ক্লাস শুরু করে দিয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থা
রাশিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ইউনিভার্সিটি, একাডেমি, ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, টেকনিক্যাল কলেজ ও স্পেশালাইজড ইনস্টিটিউশন এই কয়েকটি স্তরে বিন্যস্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞান, কলা, বানিজ্য শাখার সব বিষয়ে পড়া সম্ভব। এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাচেলর ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি ও পিএইচডিসহ বিভিন্ন ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিষয়ভেদে কিছুটা ভিন্ন হলেও রাশিয়ার ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ ৪ বছর, মাস্টার্স ডিগ্রির মেয়াদ ২ বছর, স্পেশালাইজড ডিপ্লোমার মেয়াদ ৫-৬ বছর। তবে ব্যাচেলর, মাস্টার্স বা যে কোন ডিপ্লোমার জন্য প্রথম ১ বছর রুশ ভাষা শিখতে হবে। কিছু কিছু বিষয়ে ইংরেজী ভাষায় পড়ার ও সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বশেমুরবিপ্রবি’তে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

বৃত্তি
রুশ সরকার প্রতি বছর বাংলাদেশি ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কিছু বৃত্তি দিয়ে থাকে যা রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের মাধ্যমে সংবাদপত্রে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ৮০ শতাংশ নাম্বার পেলে তবেই বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে। ২০২১ সালে যদি কোন পরিবর্তন না হয় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা https://future-in-russia.com এ আবেদন করতে পারবে। তবে উচ্চ শিক্ষায় রাশিয়ায় যাওয়ার পূর্বে রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে থেকে রাশিয়ান ভাষা কোর্স করে নেওয়া উওম। তবে মনে রাখবেন রুশ ভাষা কোর্সে ক্লাস শুরু হয় জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবরে যা পনের দিন আগে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। রুশ সরকারের বৃত্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারবেন।

নিজ খরচে পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ
রাশিয়ার পড়াশোনার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। বিষয়ভেদে পড়াশোনার খরচ আলাদা যেমন বিজ্ঞান বিভাগের জন্য বাৎসরিক টিউশন ফি ২৫০০ ডলার থেকে ৯৫০০ ডলার, কলা বিভাগের জন্য বাৎসরিক ২৫০০ ডলার থেকে ৫৫০০ ডলার এবং বানিজ্য বিভাগের জন্য বাৎসরিক ২৫০০ ডলার থেকে ৬৫০০ ডলার পর্যন্ত নির্ভর করে। তবে রাজধানী মস্কোর বাহিরে টিউশন ফি আরও কম। বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত হোষ্টেল, যা প্রতি বছর ৪৫০ থেকে ২৫০০ ডলার পর্যন্ত নির্ভর করে।
বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ না পেয়ে যারা স্বল্প খরচে বিশ্ব স্বীকৃত সনদের জন্য স্বপ্ন দেখছেন তারা নিশ্চিন্তে রাশিয়াকে বেছে নিতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  করোনা: দ্বিতীয় দফায় বয়সে ছাড় পাচ্ছেন সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা

বিস্তারিত তথ্য জানতে যোগাযোগ
সৈয়দ বজলুল হাসান রাজীব, শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান, রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, ৪২, ভাষা সৈনিক এম. এ. মতিন সড়ক (সড়ক #৭) ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা-১২০৫, মোবাইল ০১৮১৭২৯৪৫৯৫

সংবাদটি শেয়ার করুন