ঢাকা | সোমবার
১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমার শক্তির মূল উৎস ছাত্র-ছাত্রীরা : ইবি উপাচার্য

আমার শক্তি ও অনুপ্রেরণার মূল উৎস আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা। বিগত চার বছরে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি তাদের জন্য সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। উপাচার্যের মেয়াদ পূর্তির বিশেষ সাক্ষাতকারে এমনটাই মন্তব্য করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারী।

২০১৬ সালের ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তকে উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কোনো উপাচার্যই মেয়াদপূর্ণ করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারী ১২তম উপাচার্য হিসাবে তার মেয়াদ পূর্ণ করছেন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য যিনি চার বছর সাফল্যের সাথে মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, একজন উপাচার্য তার মেয়াদ পূর্ণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। সরকার আমার ওপর যে দায়িত্ব আরোপ করেছেন সে দায়িত্ব আমি শান্তিপূর্ণ ভাবে পালন করতে পেরেছি এজন্য একধরণের স্বস্তি অনুভব করছি।

দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়কে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন তার কতভাগ বাস্তবায়িত করতে পেরেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার মনে হয় গত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঞ্চয়ের খাতায় অনেক গুলো সঞ্চয় সংযুক্ত করতে পেরেছি। কেননা গত চার বছরে আমার ভিশন ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা, তাছাড়া আমি চেষ্টা করেছি এখানের যে কোর্সগুলো আছে সেগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করার। প্রতিটি বিভাগে সেমিস্টার সিস্টেম চালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান যে সমস্যা ছিলো সেশনজট তা নির্মুল করেছি।

বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি, এমফিল, পিএইচডির যে নীতিমালা সেগুলো সংস্কার করে এখানে কোয়ালিটি এনশিওর করা হয়েছে যেটা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল এডুকেশন। কোয়ালিটি এডুকেশনের সব ক্রাইটেরিয়া আমারা এখানে বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। সুতরাং আন্তর্জাতিকীরনের পথে আমি এটা আশাবাদী যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছে এবং এই ধারা বজায় থাকলে আমরা আশা করি যে খুব শিঘ্রই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও লাভজনক জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো।

অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, অবকাঠামোগত দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গত চার বছরে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৫৩৭ কোটি টাকার যে বাজেট আমাদের দিয়েছে তা আমরা ই-টেন্ডারিং মাধ্যমে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এবং আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই এই কাজগুলো শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫% শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনের সুযোগ পাবে। এতে আমাদের পরিবহনের চাপ কমবে। এবং আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে এখানে পড়াশোনার আরও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

বিগত চার বছরে উপাচার্যের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে পেরেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সাফল্যের বিষয়টি আমি সময় বা তাদের ওপর ছেড়ে দিলাম যারা বিগত চার বছরে দেখেছে আমি কি করেছি বা না করেছি। আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। আমার মেধা ও সততা দিয়ে কাজ করি। আমার দিকথেকে সেন্স অব এচিভমেন্ট আমার ভেতর আছে কিন্তু কতটুকু আমি বাহ্যিক ভাবে সফল সেটি সময়ের ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে আমার মধ্যে একটা সন্তুষ্টির জায়গা সৃষ্টি হয়েছে।

কাজ করতে গিয়ে বিগত চার বছরে কোন কোন দিক থেকে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, সেরকম উল্লেখযোগ্য বাঁধা আসেনি তবে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যেমন স্বাভাবিক প্রবণতা যেমন বিভিন্ন ক্ষুদ্র দলীয় মতভেদ আমার চলার পথকে একটু আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু শিক্ষক কর্মচারী ও আমার মূল শক্তি আমার ছাত্র-ছাত্রীরা সেই বাঁধা অতিক্রম করতে বিপুল ভূমিকা পালন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য চার বছর যথেষ্ট কিনা এবিষয়ে তিনি বলেছেন, একটা উন্নয়নের পরিকল্পনা এবং তার ধারাবাহিকতার জন্য বেশ খানিকটা সময় লাগে। তবে প্রথম থেকে কাজ করতে পারলে চার বছর খুব একটা কম সময় না। কোভিড-১৯ এর জন্য বিগত ছয়মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমার আমাদের অনেক কাজের ফিনিশিং দিতে পারিনি।

পরবর্তী মেয়াদে আবার উপাচার্যের দায়িত্ব পেলে কোন কাজটি আগে করবেন এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরবর্তী দায়িত্বে কে আসবে সেটা সদাশয় প্রধানমন্ত্রী জানেন। তবে পরবর্তীতে যেই দায়িত্বে আসুক বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিপ্রবাহ যে একটা ট্র্যাকের ওপর আনা হয়েছে সেটা চলমান থাকলে আমরা যে পরিকল্পনা গুলো করেছি সেগুলো পূর্ণতা পাবে। এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যা পরিকল্পনা সেটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সেটা যদি কোন কারণে থমকে দাড়ায় সেটা আমাদের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে। সুতরাং আমি পুনরায় আসি বা না আসি যিনি আসবেন তার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে কাজের ধারাবাহিকতা যেন ঠিক থাকে।

উল্লেখ্য, উপাচার্য আসকারী শিক্ষা জীবনে ১৯৮০ সালে রাজশাহী র্বোড থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি উর্ত্তীণ হন। ১৯৮২ সালে একই র্বোড থেকে এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ সহ বোর্ডে ৫ম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তিনি ভারতের পুণা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রিঅর্জন করেন।
তিনি ইতোপূর্বে ইংরেজী বিভাগে তিনবার সভাপতি, ছাত্র উপদেষ্টা, বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক, শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে/ এফ এন টি

সংবাদটি শেয়ার করুন