ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন ক্লাস নিয়ে নবীনদের ভাবনা

করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের স্তমিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে ইউজিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিলো অনলাইন ক্লাস। তবে এ নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। উন্নতমানের ডিভাইস, দ্রুত ও স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেটের অভাবে অনেকেই হচ্ছে বঞ্চিত। অনলাইন ক্লাস কারো কাছে সম্ভাবনাময় আবার কারো কাছে দুর্বোধ্য। অনলাইন ক্লাস নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নবীন শিক্ষার্থীদের অনুভূতি জানাচ্ছেন আমাদের প্রতিনিধি ওয়াজহাতুল ইসলাম ওয়াস্তি।

বর্তিকা পাল হিয়া, লোকপ্রশাসন বিভাগ

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্লাস শুরুর চতুর্থ দিনে এসে শুনলাম স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ ঘোষণা হবে করোনার জন্য। পরদিন থেকেই বন্ধ হয়ে গেলো, তাই বাড়িতে চলে আসতে হলো। বাড়ি আসার পর অনেকদিন ধরেই শুনতে লাগলাম অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অনলাইন ক্লাস শুরুও হলো। শুরুর দিকে অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের আগ্রহ প্রকাশ করলেও ক্লাস শুরু হওয়ার পর ক্লাসে অংশগ্রহণের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আমরা আসলেই অনেক পিছিয়ে পড়ছি ঘরে বসে বসে। যদিও ক্লাসে বসে ক্লাস করার আনন্দ, সুবিধা কোনটাই পাওয়া যায় না। অনলাইন ক্লাসে, কিছুটা হলেও এগোতে পারছি আমরা। কিন্তু সবকিছুরই ভালো আর খারাপ দিক একইসাথে চলে। আমাদেরই অনেকে ক্লাস করতে পারছে না ইন্টারনেট সমস্যার জন্য। শহরে এটা অনেক সহজ হলেও গ্রামে ইন্টারনেটের অনেক সমস্যা। যেমন আমাদেরই কয়েকজন বন্ধু বাসা থেকে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রতিদিন ক্লাসে এ্যাটেন্ড করে। এরকম যখন শুনি তখন সত্যিই খারাপ লাগে। যারা ক্লাস করতে পারছে না পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি তারা একটা হীনমন্যতায় ভুগছে। যদিও যারা রেগুলার ক্লাস করছে তারা যথাযথভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করছে এবং টিচাররাও কো-অপারেট করছেন ক্লাস রেকর্ডিং করে। তবুও ক্লাস না করতে পারার একটা মানসিক অশান্তি থেকেই যায়। টিচাররাও অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হয়েই ক্লাস নিয়ে থাকেন। উনারাও অনেক চেষ্টা করছেন আমাদের এগিয়ে নেয়ার।

খালিদ হাসান সিয়াম, অর্থনীতি বিভাগ

প্রথম প্রথম অনলাইন ক্লাসের কথা শুনে এক অন্যরকম অনুভূতি হত। আগে কখনোই অনলাইন ক্লাস করিনি। কিন্তু ক্লাস শুরু হওয়ার পরে এই অনুভূতি কেন যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি যে এভাবে ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখা খুব কষ্টের এবং পড়ার টপিক গুলো বুঝতে সমস্যা। এর পাশাপাশি ডাটার সমস্যা তো আছেই। দিনে তিন ঘন্টা ক্লাস করতে প্রায় দেড় থেকে দুই জিবি ডাটা লাগে। মোবাইল ডাটার দাম বেশি হওয়ায় ডাটা কিনতে প্রায়সময়ই হিমশিম খেতে হয়। অনলাইন ক্লাসগুলো চালিয়ে যাওয়া উচিত কিনা- এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া শক্ত। কারণ একদিকে যেমন ক্লাস করার অসুবিধা আছে অপরদিকে ক্লাস করার সুবিধাও আছে। ক্লাসগুলো যদি রেকর্ড করে শিক্ষার্থীদেরকে দেয়া যায় তাহলে পরবর্তীতে ক্লাসের ভিডিওগুলোও কাজে লাগবে এবং কেউ ক্লাসে থাকতে না পারলেও পরবর্তীতে সেই ক্লাসটির ভিডিও লেকচার দেখে নিতে পারবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ডাটা প্যাকেজের ব্যবস্থা করে দেয়া যাতে করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসগুলোয় নিয়মিত অংশ নিতে পারে।

মাহমুদা এনাম অনন্যা, দর্শন বিভাগ

অনলাইন ক্লাস মানে আমার কাছে প্রয়োজনের আয়োজন। করোনার থাবায় পাঁচ মাস ধরে ক্লাসরুমে ঝুলছে তালা। এই প্রতিকূল অবস্থায় শিক্ষা চর্চার প্রয়োজনে অনলাইন ক্লাসের আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই আয়োজনের স্বার্থকতা আসবে তখনই যখন শতভাগ শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসের আওতায় আনা যাবে। এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সংস্পর্শে রাখতে এবং করোনা পরবর্তীতে পড়ালেখা বা ক্লাসরুমের সাথে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের বিকল্প নেই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইল অপারেটরগুলোর সাথে চুক্তি করে স্বল্পমূল্যে ডাটা সরবরাহ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুতগতির নেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার জোর আহবান করছি। অনেক শিক্ষার্থীই অতিরিক্ত ডাটা চার্জ ও দ্রুতগতির নেট সেবা না পাওয়ার দরুন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেসকল সমস্যা আছে সেগুলোর আশু সমাধান হলে অনলাইন ক্লাস বাস্তবিক অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে এবং সকলের কাছে প্রয়োজনের আয়োজন হয়ে উঠতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

ইমতিয়াজুল হক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ

করোনা মহামারীতে যখন সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুেলা বন্ধ তখন সরকােরর নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইন ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমদিকে, অনলাইন ক্লাসে তুলনামূলক কম শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকেলও এ হার এখন তুলনামূলক উর্ধ্বমুখী।কারণ, আমার অনেক সহপাঠী যে এলাকায় থাকে সেখানকার ইন্টারেনেটর গতি প্রয়োজনীয়তার চেয়ে অপ্রতুল, অনেকের কাছে স্মার্টেফান নেই, অনেকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। এই যে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী পিছিয়ে যাচ্ছে বা একটা বৈষম্য তৈরী হচ্ছে তাদের জন্য বা দেশের জন্য এটি মোটেও সুখকর নয়। বিকল্প হিসেবে তাই আমােদর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করছেন। শিক্ষকরা দায়িত্ব নিয়ে ক্লাস সংরক্ষণ করেছন এবং তা শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে। বিভাগের শিক্ষকরা আন্তিরকতার সহিত সকল শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। যাদের স্মার্টেফান নেই এবং ইন্টারেনট ধীরগতির তারা যেন অনলাইন ক্লাসগুলা পায় সে বিষয়টা নিশ্চিত করছেন। তবে দীর্ঘেময়াদী পরিকল্পনায় অনলাইন ক্লাসে আশার আলো দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সর্বোপরি, অনলাইন ক্লাসে খাপ খাইয়ে নেওয়াটাও অনেকটা কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আনন্দবাজার/শাহী/ওয়াজহাতুল

সংবাদটি শেয়ার করুন