আমতলা, জামতলা, কদমতলা এমনই বহুরূপী নামে পরিচিতি পায় বিভিন্ন এলাকা বা স্থান। হাজারো দিনের গল্প আর ইতিহাসের সমন্বয়ে গড়ে উঠে এমন মজার মজার নাম। কখনো কখনো স্থান বা উদ্ভিদের উপর ভিত্তি করেও গড়ে উঠেছে আজকের দর্শনীয় ও ভ্রমণ উপযোগী বিভিন্ন জায়গা। ঠিক একই ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ( গবি) বাদামতলা। গল্প, আড্ডা, গান, কবিতা আর হাজারো স্রৃতির মেমোরি কার্ড এই বাদামতলা । চোখ বন্ধ করলেই যেন সেই মেমোরি কার্ডের প্রতিটি কিলোবাইট মনে করিয়ে দেয় হাজারো মূহুর্তের কথা।
সকলের আনন্দ বাড়াতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বাদামতলায় বসার অতি উত্তম ব্যবস্থা করেছেন গবি প্রশাসন। সকলেই তার সুবিধাটাও গ্রহণ করে অবলিলায়। ক্যাম্পাসে এসেছে কিন্তু বাদামতলায় বসেনি এমন কাউকে পাওয়া সম্ভবই না একদমই তা ইয়াম্পসিবল। বাদামতলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধি মোঃ আশিকুর রহমান।
নিজের ক্যাম্পাস বলে বানিয়ে বানিয়ে বলা হবে এমনটা কিন্তু নয়। বাদামতলা নিয়ে সকলের মনেই বিরাজ করছে হাজারো মন্তব্য আর ভালো লাগার অনুভূতি। বাদামতলা সম্পর্কে নিজের অনুভূতি জানান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওথেরাপি বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা যাহীন চৌধুরী অপর্না। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের প্রিয় জায়গা গুলোর মধ্যে বাদামতলা অন্যতম। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য অনেকটা এখান থেকেই উপভোগ করা যায়। বাদাম গাছগুলো ছায়াতরু রুপে বসার জায়গাটাকে আরো অলংকিত করে। সবচেয়ে বেশি মনোমুগ্ধকর লাগে গাছের পাতার লাল -সবুজ মিশ্রণটা। ক্লাসের ফাকে বা ছুটির ঘন্টায় যেমন এখানে বসে পড়ার ফাকে অাড্ডা দিতে ভাল লাগে তেমনি একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
প্রান রসায়ন ও অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রওনক জাহান বিথী বলেন, ‘বাদামতলা যে কেবল শিক্ষার্থীদের আড্ডা দেওয়ার জায়গা এমনটা নয় ! প্রায় সব পরীক্ষাতেই দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থীরা বাদামতলায় বসে পড়াশোনা করছে । পরীক্ষা হলে ঢোকার পূর্বে নোট খাতা ও বইয়ে শেষবার চোখ বুলিয়ে নেওয়ার জায়গা হিসেবে ভূমিকা রাখে এই বাদামতলা।’
জাতগতভাবে এই বাদাম গাছকে সবাই কাঠবাদাম বলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে না ছিল কোনো বাদাম গাছ আর না ছিল কোনো বাদামতলা। তাই বাদামতলার ইতিহাসও খুব বেশিদিন আগের নয়। গবি ক্যাম্পাসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করা এই বাদামতলা সম্পর্কে মনের কথা উজার করে জানান সদ্য পাশকৃত শিক্ষার্থী ও গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ( গবিসাস) এর উপদেষ্টা মোঃ উমর ফারুক । তিনি বলেন, শীতল হাওয়ার মনোরম স্থানের কথা যদি চোখ বন্ধ করে চিন্তা করি প্রিয় ক্যাম্পাসে তাহলে বাদাম তলার কথাই মনে পড়ে, বহু স্মৃতি বিজড়িত এই বাদাম তলায় ক্লাস করার পূর্বে ক্লাসের বিরতিতে বসে বসে ফুসকা খাওয়া সাথে আড্ডার এক অনন্য স্থান, সূর্যের প্রখর তাপে যেমন বাদাম তলা আশ্রয় স্থল একই ভাবে বৃষ্টির বর্ষণেও বাদাম তলা আশ্রয় স্থল। ঘনঘন পাতা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো গাছ নিচে টাইলসের বসার স্থান, যেখানে বসে সামনের বিশাল সবুজ মাঠের দিকে তাকিয়ে কেটেছে বহু বিকেল, সত্যি সত্যিই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গণ বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এর রয়েছে বিশাল বড় নিজস্ব ক্যাম্পাস ও সবুজ চাদরে মোড়ানো মস্ত বড় খেলার মাঠ। রাস্তার পাশেই বাদামতলা যেন নতুন শিক্ষার্থীদের এবং অতিথিদের আপ্যায়নে স্বাগতম জানাচ্ছে বলে মনে হয়। বাদামতলার কাঠবাদাম যে কেবল সৌন্দর্যেরই প্রতীক তা কিন্তু নয়, কাঠবাদামে রয়েছে শরীর সুস্থ্য রাখার পুষ্টিগুন। তাইতো প্রায়ই দেখা যায় শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের বাদামতলায় বাদাম কুড়াতে।
আনন্দবাজার/শাহী/আশিক