“আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে জানিনে জানিনে
কিছুতে কেন যে মন লাগে না
ঝরঝর মুখর বাদল দিনে। ”
——– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
রবী ঠাকুর প্রকৃতির মহিমা বুঝতে পেরেছিল বলেই তার গানে বাদলের ধারা নতুন ছন্দ এনে দিয়েছে সাহিত্যে। বাদল দিনের ঝরঝর বৃষ্টিতে কবি মন ঘরে বসতে নারাজ। প্রকৃতির টানে ছুটে যেতে মন চাই তার, ব্যস্ত হয়ে ওঠে কবির মন। বাদল দিনে ঠিক তেমনি ব্যস্ততা আর আনন্দঘন মুহূর্ত কাটতো সাভারের গণ বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের (গবি) ক্যাম্পাসে। বৃষ্টিভেজা এই ক্যাম্পাস বাদল দিনে যেন তা সাজে নতুন এক রূপে। গ্রীষ্মের রোদকে বিদায় জানিয়ে যখন শুরু হয় বাদলের ধারা তখনই শিক্ষার্থীরা খুজে পায় নতুন আমেজ। তাদের মন আর বসে থাকতে চাই না রুটিন এ ঘেরা সেই বদ্ধ জীবনে। বাদলের এমন দিনেও ক্যাম্পাস থাকতো শিক্ষার্থীপূর্ন। বিভিন্ন গান আর গল্পে মুখরিত হয়ে ওঠে গবি ক্যাম্পাস।

স্কুল, কলেজ জীবন পার করে মানুষ শুরু করে বিশ্যবিদ্যালয় জীবন। তাই এই সময়ে গড়ে উঠা বন্ধুত্ব টিকে থাকে আজীবন। তাদের এই বন্ধনের বহিঃপ্রকাশ মেলে আমাদের গবি ক্যাম্পাসের বাদলের দিনেও। ক্যাম্পাসের রাস্তায় তাকালে দেখা যায় দুই বন্ধু একটি মাত্র ছাতার নিচে হাটছে তবু যেন তারা কেউ ভিজে যাচ্ছে না। আবার এক বন্ধুকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে অন্য বন্ধু দৌড়িয়ে যায় তাকে সাহায্য করতে। আবার অনেক সময়ই দেখা যায় বন্ধুদের মিলে একসাথে ভিজতে । অক্সিজেন ছাড়া যেমন জীবন চলে না ঠিক তেমনি খুব ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছাড়া এমন চিত্র দেখাও অসম্ভব। গান আড্ডায় মুখরিত গবি ক্যাম্পাসে বৃষ্টির অনুভূতি একেক জনের কাছে একেক রকম।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী ( সিএসই) বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হোসাইনুল আরেফিন সেতুর মতে বাদল দিনে ক্যাম্পাস সাজে নতুন এক রুপে, তার ৪ বছরের অভিজ্ঞতায় বাদলের দিনগুলো ছিলো সবচেয়ে প্রিয়। প্রাণ রসায়ন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল জানায় গবির বৃষ্টিভেজা ক্যাম্পাসে আসলে তার ছোটবেলার কথা মনে পরে যায়। শৈশবের সেই কলাপাতা দিয়ে ছাতা বানানোর স্রৃতি তাকে এই বাদল দিনে বার বার তাড়া করে। বাংলা বিভাগের প্রভাষক সরোজ মেহেদী বলেন, “প্রকৃতির এক আশির্বাদ হচ্ছে বৃষ্টি। তাই হাজার মন খারাপ থাকলেও ক্যাম্পাসে বাদলের ধারা কাজের এক নতুন অনুভূতি জোগায় মনে। “

অন্যান্য বছরের মতো এই বছরও বর্ষা এসে ধরা দিয়েছে প্রকৃতিতে। বৃষ্টি ভেজা প্রিয় ক্যাম্পাস গণ বিশ্ববিদ্যালয় দাড়িয়ে আছে নলামের বুকে! কিন্তু ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের কারনে আজ নেই বৃষ্টি ভেজা ক্যাম্পাসের হাজারো শিক্ষার্থীদের সেই আড্ডা। গল্প, গান আর আড্ডায় মুখরিত গবি ক্যাম্পাস আজ নিস্তব্ধ। গবি ক্যাম্পাসও যেন আজ করোনায় আক্রান্ত, যার একমাত্র ঔষধ তার প্রিয় শিক্ষার্থীদের পদচারণা। করোনা কাটিয়ে খুব দ্রুত প্রানের ক্যাম্পাস গণ বিশ্ববিদ্যালয় ফিরে পাবে তার পুরনো স্পন্দন এবং হাসি আড্ডায় মুখরিত হয়ে উঠবে এমনটিই প্রত্যাশা গবির সকল শিক্ষার্থীদের।
ছয় ঋতুর এই বাংলাদেশে বৃষ্টি যেন বয়ে আনে নতুন এক প্রশান্তি। পাঠ্যক্রমের গন্ডি পার করে, গল্প, গান, আড্ডায় নতুন অধ্যায় যোগ করে বৃষ্টির আগমন। রবী ঠাকুর, নজরুল সবাই যেন আরেকবার আগমন করে ক্যাম্পাসের সকলের প্রানে, তাদের গান আর কবিতার মাধ্যমে। জীবনের সব কথা ভুলে গেলেও বাদল দিনের ক্যাম্পাসের স্রৃতিগুলো তারা কখনও ভুলতে চাই না।
আনন্দবাজার/শাহী