গত ১৬ জুলাই পিরোজপুরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সৈয়দ আলী রেজার দেওয়া বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি বিষয়টি সমালোচনা করে শিক্ষার্থীরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দিতে থাকে। একই সাথে নীতিনির্ধারকদের এ ধরনের সীদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা মনে করেন একই নামের দুটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে একদিকে যেমন সাধারণ শিক্ষার্থীরা অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারেন, অন্যদিকে পরবর্তীতে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
একই নামে দুটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং নন্দিত ছাত্রনেতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ফেসবুকের স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, “১৯৯৯ —-২০০১—-২০০৮—-২০১১ —২০১২।।
এতটা সময় অনেক সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ২০১১ থেকে যাত্রা শুরু হয় এবং ২০১২ এর জানুয়ারি থেকে ১৪০ জন কে নিয়ে ক্লাস শুরু করে বশেমুরবিপ্রবির। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাম আর গোপালগঞ্জে অবস্থিত বিধায় ক্ষমতায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিএনপি -জামাত। এই ইতিহাস সবার ই জানা।
যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে এতটা সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে হয়েছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এত তাড়াতাড়ি মুছে যেতে পারে না। মানুষ তার জীবন দিয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করে, সকল বশেমুরবিপ্রবিয়ানরাও প্রস্তুত আছে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে। দুটি একই নামে হওয়ায় খুব কোশলেই বাদ পরে যাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাম টুকু।।সবাই বলবে পিরোজপুর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আর গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।জাতির জনকের নাম দিতে গিয়ে কৌশলেই জাতির জনকের নাম আপনারা বাদ দিয়ে দিচ্ছেন অথচ সেইদিকে আপনাদের খেয়ালই নেই। বঙ্গবন্ধু কে ধারন করতে হয়। অথচ আফসোস লাগে আমরা আমাদের স্বার্থের জন্য জাতির পিতাকে ধারন না করে ব্যবহার করি।”
মতামত ব্যক্ত করার পাশাপাশি বশেমুরবিপ্রবিতে অধ্যায়নরত রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেগঘন ভাষায় খোলা চিঠিতে লিখেছেন , “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না, আর আজ সেই বাংলাদেশে তাকে নিয়ে নানা ভাবে কিছু মহল ষড়যন্ত্র করে চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ আমরা চাই পুরো দেশে এবং বিশ্বে পরিচিতি পাক এবং পরিচিতি পাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে একই নামে পিরোজপুরে বিশ্ববিদ্যালয় করা কতটা যৌক্তিক, যেখানে ১৯ বছরের সংগ্রাম করে টিকে থাকা /রয়েছে আমাদের ঐতিহ্য আর গৌরবের বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশে আর কোন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রয়োজন নাই, যদি মনে করেন আছে, তাহলে করতে পারেন কিন্তু একই নামে বিশ্ববিদ্যালয় করে শাখা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না। বাংলাদেশে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর নামে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় করে শাখা সৃষ্টি করেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামে নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নাম মেনে নেওয়া হবে না। আগে পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করার কথা ছিল, আর আজ তা পাল্টে ফেললেন, কেন? আপনারা জানেননা একই নামে গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বঙ্গবন্ধুর নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে আমাদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কথা হলো এরকম একটি বিষয়ে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে কেন? এ বিষয়ে তো আমাদের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, গোপালগঞ্জবাসি, সরকারের উর্ধতন কতৃপক্ষের সোচ্চার হওয়া উচিত তথা প্রতিবাদ করা উচিত।
দুঃখের সাথে বলতে হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি দেখার মতো কেউ নেই, যেখানে বঙ্গবন্ধুর নামে নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংকটময় অবস্থা। কেন এ বিষয় গুলো দেখলেতো হয়? যেখানে ভিসি পদসহ কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি রয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রযোজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেন? আজ আমরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে কতগুলো সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি, কিন্তু তা দেখার কেউ নেই।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অনেক যায়গা আছে, সে জমি গুলো অধিগ্রহণ করেন, অবকাঠামো গত উন্নয়ন করেন, এতে করে সিট সংখ্যা বাড়ান, না যায়গা নেই বলে পিরোজপুরে শাখা সৃষ্টি করার চেষ্টায় আছেন?”
তিনি সর্বশেষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, আপনি ক্ষমতায় থাকতে জাতির পিতার নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম অবস্থা করার সাহস তারা কিভাবে পায়। আপনি ছাড়া আমাদের আর দেখার কেউ নেই। আপনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে একটু তাকান। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”
আনন্দবাজার/শাহী/আকীক