ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পালটে গেছে লেখাপড়ার পদ্ধতি

করোনাভাইরাস নানা আঙ্গিকেই আঘাত করেছে পৃথিবীতে। শুধু আক্রান্ত কিংবা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েই সে থেমে যায়নি! পরিবর্তন এনেছে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি কার্যক্রমে। বাসায় বসেই অফিস, মিটিং কিংবা ব্যবসায়িক কাজকর্ম সারতে হচ্ছে। ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনাও চলে এসেছে অনলাইনের আওতায়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা যার যার বাসায় বসেই চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

বই-খাতা আর স্মার্টফোন নিয়ে পড়তে বসেছে গৃহকর্মী সোনিয়া। অনলাইন ক্লাস চলছে, সোনিয়া মন দিয়ে পড়ছে। এমনই একটা মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলেন তাসনুভা সারওয়াত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবিটা হয়ে ওঠে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

তাসনুভার লেখা থেকে জানা যায়, পড়ালেখায় মেয়েটির আগ্রহ দেখে তাসনুভার মা ইশিতা সারওয়াত তাকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন ঢাকার মিরপুরের একটা স্কুলে। ঘরের কাজকর্ম সেরে সোনিয়া এখন নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস করতে বসে।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রভাষক তাসনুভা বলেন, আমাদের বাড়িতে যখন যে কাজ করেছে, এমনকি আমাদের দারোয়ানের ছেলেমেয়েদেরও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন মা। ছোটবেলা থেকে এমনটা দেখে এসেছি। এবার মানুষের সাড়া দেখে বুঝলাম, সোনিয়াদের পড়ালেখা করাটা এখনো অনেকের কাছে বিস্ময়কর। আমি অবশ্য এভাবে ভাবিনি। ছবিটা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল আমার ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করা।

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের উম্মে সাঈদার। তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানে পড়ছেন। তিনি বলেন, জানেন, একটু ঝড় হলেই আমাদের এদিকে ২-৩ দিন কারেন্ট থাকে না।

এত সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও সাঈদা অনলাইন শিক্ষার ওয়েবসাইট কোর্সেরায় (coursera.org) গর্ভকালীন পুষ্টি বিষয়ে একটি কোর্স করেছেন। কোর্সেরা এমন একটি অনলাইন মাধ্যম, যার মাধ্যমে ‍যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজসহ বহু নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স করার সুযোগ আছে। অনেক কোর্স করা যায় বিনা মূল্যে। আবার কিছু কিছু কোর্সে সনদপত্র পেতে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি দিতে হয়।

কোর্সেরার ভারত ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাঘব গুপ্তা ই-মেইলে জানিয়েছেন, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত কোর্সেরায় নিবন্ধিত মোট বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজারই নিবন্ধন করেছেন এ বছর এপ্রিল-মে-জুন, এই তিন মাসে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশের একশ’র বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩২২টি প্রোগ্রাম উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ছেলেমেয়েদেরও অনলাইনে উন্মুক্ত মাধ্যমে পড়ালেখার অভ্যস্ততা বাড়ছে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায় ধরে ধরে বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) তৈরি করেছে বাংলাদেশের রবি টেন মিনিটস স্কুল। ইউটিউবে ‘টেন মিনিটস স্কুল ক্লাস ওয়ান টু টুয়েলভ’ নামের চ্যানেলটিতে শ্রেণি ও বিষয়ভেদে সব ভিডিও সাজানো আছে।

এদিকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অনলাইনেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। করোনাকাল একসময় কেটে যাবে, তবে এই সময়ের পরিবর্তনকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে মানবজাতিকে। এই সময়ের অনলাইন নির্ভর পড়াশুনা দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন হলেও বেশ কার্যকরী একটা পদ্ধতি হয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত হয়ে যাবে বলেই আশা করা যায়।

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

সংবাদটি শেয়ার করুন