ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাময় অন্যরকম ঈদ

পবিত্র ঈদ মুসলিমদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন করোনাময় আনকমন ঈদ কেউ উৎযাপন করেনি কখনও। ইসলাম ধর্মের বাহক হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বছরে দুইটি ঈদ পালনের জন্য সব মুসলিমদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতি বছরই সারা বিশ্বের সকল মুসলিম নর ও নারী ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামে দুইটি ঈদ অনেক আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে পালন করে থাকে। পরিবার পরিজন নিয়ে হাসি আর উল্লাসে মেতে থাকে সারাদিন। ঈদের নামায ও খাবার খাওয়া শেষে ঘুরতে যেতে ভুল হয়না অনেক পরিবারের।

বেশিরভাগ পার্কগুলো থাকে শিশু ও কিশোরদের দখলে। কিন্তু এ বছরের ঈদে সবকিছুই যেনো করোনা ভাইরাসের দখলে। নেই কোন যানবাহন, নেই পার্কে ঘুরার মতো সেই উল্লাস! নেই চিরিচেনা সেই হাসিমাখা ঈদ! সবার মনে এখন করোনা আতঙ্ক। মনে একটাই ভয় আগামী ঈদ আবার পালন করতে পারবো তো সবাইকে নিয়ে? এমন আনকমন ঈদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকার প্রতিনিধি মোঃ আশিকুর রহমান।

সরোজ মেহেদী

এ বিষয়ে প্রথমেই কথা হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা-যোগাযোগ ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সরোজ মেহেদীর সাথে। তিনি বলেন, ‘ ঈদ শব্দটা মনে আসতেই বুকটা যেনো চিনচিন করে উঠে। বাংলাদেশে আছি কিন্তু পরিবার-পরিজন-বন্ধুবান্ধব ছাড়া খালি বাসায়, একা একা ঈদ উদযাপন করছি ভাবা যায় না। আমার প্রবাস জীবনের ঈদগুলোও এতটা নিরানন্দময় ছিল না যতটা না এবারের ঈদ।

তিনি আরও বলেন, আব্বা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, আম্মা নানান শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত। তাই গ্রামে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আনিনি। ঢাকায় একাই কাটিয়েছি ঈদের দিনটা। অন্য ৮/১০টা দিনের মতো। বিশেষ শপিং, বিশেষ আয়োজন, বিশেষ উদযাপন ছাড়া।’

নীলিমা শায়লা

ঈদ নিয়ে আরও কথা হয় ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক নীলিমা শায়লার সাথে। তিনি জানান, ‘ সারা জীবন মনে রাখার মতো একটি ঈদ পালিত হয়েছে এবার, সবার জন্য এই একই কথা প্রযোজ্য। কারন মনে রাখার বিষয় গুলি শুধু যে আনন্দের হয় তা নয়,কষ্টের ও হতে পারে, আবার আনন্দ- কষ্ট মিশ্রিত ও হতে পারে। এবারের ঈদটা এমনই এক মিশ্র অনুভূতিরই উদাহরণ। একদিকে পরিবার থেকে দূরে প্রথমবারের মত ঈদ পালনের অদ্ভুত কষ্ট, অন্যদিকে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার আবছা আনন্দ। তবে কষ্ট গুলি লুকিয়ে রাখতে হয়েছে, আনন্দ গুলো মা-বাবাকে শেয়ার করেছি ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে। কারণ অনুভূতি জিনিসটা ক্ষেত্র বিশেষে ভীষণ সংক্রামক। নিজের সামান্য কষ্টের প্রকাশ আপন মানুষ গুলোর কষ্ট বাড়িয়ে দিতে পারে বহু গুণ, আবার আনন্দের নূন্যতম প্রকাশ দূর থেকেও প্রিয় মানুষ গুলোর সময়কে রাখতে পারে আনন্দ মুখর। তাই দুঃখ গুলোকে সুখে রূপান্তরিত করে চেষ্টা করেছি নিজে ভালো থাকার অন্যকেও ভালো রাখার।

তিনি আরও জানান, ‘ আর এমন বিশেষ ঈদে বিশেষ কিছু করার অভিজ্ঞতা হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রতি ঈদে মায়ের হাতের যে রান্না উপভোগ করি,এবার সেটা মিস করেছি ভীষণ! তবে নিজে নিজে রেঁধে ফেলেছি দু’চার পদ যা আমার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা! পেশাগত ব্যস্ততায় আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগে যে ভাটা পরেছিল এখনই সময় সে দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়ার। এখনই সময় ক্ষুদ্র স্বার্থের বেড়াজাল ভেঙ্গে বৃহৎ মানবজাতির জন্য কিছু করার।এখনই উপযুক্ত সময় ক্ষোভ আর হিংসা কাটিয়ে সম্প্রতি আর ভালোবাসা লালন করার।

শরীফ আহম্মেদ

আনকমন ঈদ নিয়ে আরও কথা হয় কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ( সিএসই ) বিভাগের সহকারী প্রভাষক শরীফ আহম্মেদের সাথে। তিনি বলেন, ‘এই বছরের ঈদটি সত্যিই অন্য বছরের চেয়ে ভিন্নভাবে পালন করেছি। সবার সাথে ঘুরতে যাওয়া বা দেখা করা হয়তো এইবার হয়ে উঠেনি, সব সময় একটা ভয় কাজ করতো যে চারিদিকে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে! যার ফলে আমাদের পরিবারও কখন এতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এই আতঙ্কটা ছিল সব সময়। অন্যদিকে এই ঈদে ফ্রি সময় অনেক বেশি পাওয়ার ফলে সবার সাথেই ফোনে কানেক্টেড হওয়া সম্ভব হয়েছে, যা অন্যান্য ঈদে ব্যাস্ততার কারনে হয়ে উঠে না। ‘

আমাদের দেশেও করোনার প্রকোপ দিন দিন বেরেই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে সেই দিন বেশি দূরে নয় যেইদিন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোকেও হার মানাবো করোনা সংক্রমণে। তাই আমাদের সকলের উচিত আরও বেশি সচেতন হওয়ার। না হলে আকাশে শুধু ঈদের চাদ দেখেই আমাদের বলে বেড়াতে হবে একদিন ঈদ পালন করেছিলাম রে ভাই একদিন ঈদ পালন করেছিলাম। এমন ঈদ আর কখনও কারো জীবনে ফিরে না আসুক এটিই এখন লেখক ও পাঠকদের একমাত্র প্রত্যাশা।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন