ঢাকা | শুক্রবার
১১ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৮শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ঈদ আনন্দ

ঈদ দুটি শব্দের মিলন। যার ব্যাপ্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আকাশচুম্বী। বছরে মাত্র দুইটি ঈদ অত্যান্ত আনন্দ উল্লাস ও জাকজমকভাবে পালন করেন সারা বিশ্বের শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারীগন। শত ঝগড়া বিবাদ ভুলে গিয়ে কাধে কাধ ও বুকে বুক মিলিয়ে শান্তির বানী প্রচার করেন উক্ত দিন দুইটিতে। বন্ধ থাকে এই সময় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান। মুসলিমরা আনন্দ উল্লাসে সময় পার করলেও উক্ত ঈদ দুটিতে কিভাবে ছুটি পার করেন অন্য ধর্মের মানুষ তা বিস্তারিত জানাচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকার প্রতিনিধি মোঃ আশিকুর রহমান।

ছন্দা রানি সরকার

মনের মাধুরী মিশিয়ে মনের কথা ব্যাক্ত করেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী ছন্দা রানি সরকার। হিন্দু ধর্মাবলম্বী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ আমার কাছে ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি! আর সবার মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। ঈদ এর ছুটিতে বাসায় আসা হয়, ভালোই লাগে। বাসায় সবার সাথে ঈদ পালন করা হয় যেহেতু ঈদ এর ছুটি। যদিও রোজা আমরা থাকি না কিন্তু ইফতারি টা খেতে মিস করি না! ঈদ এর দিন সেমাই, মাংস, পোলাও ভাত আমরাও এইসব খেয়ে থাকি। কারণ ঈদ একটি উৎসব আমি মনে করি । দীর্ঘ একমাস ঈদ এর ছুটি পায়। বাবা মা ভাই বোনদের সাথে সময় কাটাতে পেরে ভালো লাগে।’

হ্লামংউ মারমা

ঈদ নিয়ে আরও কথা হয় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হ্লামংউ মারমার সাথে। তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। তার মতে, ‘ আমাদের কোন উৎসবের আয়োজন নেই তবে ঈদের ছুটি তে বাড়িতে সবার সাথে ভালো সময় কাটিয়ে উঠতে পারি। এছাড়া সবাই যে যার কর্মস্হলে থাকার কারণে পরিবারের সবাই একসাথে মিলিত হওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনা। এই সময় বিশেষ করে আম,কাঁঠাল, কাজুবাদাম বিভিন্ন ফলের সিজন। সব মিলিয়ে আমার ঈদের ছুটি ভালোই লাগে। প্রতিটা পবিত্র দিন সবার জন্য মঙ্গলজনক । করোনা মহামারীর কারনে এবার ঈদ টা অন্য রকমের পালন হোক সবাই নিজ ঘরে থেকে ঈদের আনন্দে আলোকিত হোক।’

ধীরা ঢালি

অন্য ধর্মের অনুসারী হলেও ঈদ নিয়ে অনেকটা মনের রং ঢেলে জানান উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ধীরা ঢালি। তিনি জানায়, ‘ ঈদ মানে অপেক্ষার প্রহর শেষে অফুরন্ত খুশি, নতুন পোশাকে নিজেকে সাজানো, নতুন করে নিজেকে উপস্থাপনা করা। ঈদের মাধ্যমে আমরা সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধনে আবদ্ধ হই। তবে আমার এবারের ঈদ ছিল একটু ভিন্ন, রংধনুর সেই মেলা ছিল না, বন্ধুদের সঙ্গে ডানা ঝাপটানোর তাড়া ছিলনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যদিয়ে শেষ হয় এই কাঙ্খিত দিনটি।”

ধর্মের দিক থেকে আমরা মুসলিম, কেউ হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টান কিন্তু আমাদের সবারই একটাই পরিচয় আমরা মানুষ। আমাদের সবার শরীরেই বইছে একই রক্ত। ঈদ মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও তা আনন্দের এবং উৎসবের এই বিষয়টা সত্যিই খুব গর্বের। করোনাকালীন এই সময়ে আমরা সবাই ঘরেই অবস্থান করি, আর দোয়া করি আল্লাহর কাছে তিনি যেন খুব দ্রুত আমাদের এই মহামারি থেকে রক্ষা করেন।

জাতি, বর্ন সব ভুলে আজ আমরা মানবতার জয়গান করি। লকডাউনের উৎসব নয় আমরা চাই মানুষ আবার ফিরে পায় যেন পাখির মতো উড়ে বেরানোর স্বাধীনতা, মন খুলে হাসি, গান আর আড্ডায় মাতানোর স্বাধীনতা। জন্ম হোক নতুন এক শান্তিময় পৃথিবীর।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন