শনিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় করোনার ভয়

থাকবো না আর বদ্ধ ঘরে,
দেখবো এবার জগৎটাকে
কেমন করে মরছে মানুষ
করোনা ভাইরাস এর আক্রমণে।

মেইড ইন চাইনা ! এই শব্দটি বাংলাদেশের সকল মানুষের কাছে সকালের নাস্তার মতই পরিচিত। শুধু বাংলাদেশে নয় প্রযুক্তিতে সারা পৃথিবীতেই প্রায় চীনের নাম সুপরিচিত। যদিও বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই পরিচিতির মত্রাটা একটু বেশি। সময়ের ব্যাবধানে চীন প্রযুক্তির সাথে সাথে ভাইরাসও রপ্তানি করছে বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাস তার রাজত্ব বিস্তার করেছে শতাধিক দেশে। বাদ যায়নি বাংলাদেশ নামক আমাদের ছোট্ট দেশটি । বাংলাদেশের উপর ভড় করেছে নয়া আতঙ্ক করোনা । ভয়ে সারাদেশের মানুষ এখন চিন্তিত , তাদের কাছে একসময়ের আশির্বাদ মেইড ইন চাইনা এখন অভিশাপে পরিনত হয়েছে ।

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মতামত জানাচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আশিকুর রহমান ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ শফিক ইসলাম বলেন, আমাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে স্বস্তি দিচ্ছে ঠিকই। তবে ভয়ের কারণও রয়েছে। কেননা আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ তুলনামূলক বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করি। আমরা মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা কোলাহল বর্জন করার পরামর্শ দিলেও জাতি হিসেবে বাস্তবে আমরা তা কতটুক মানতে পারছি? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিটি হলের গণরুমে কক্ষভেদে একই সাথে ১০-৩০ জন শিক্ষার্থী থাকছেন। নিয়মিত ক্লাস করা থেকে শুরু করে গণপরিবহন ব্যবহার সবকিছু চলছে আগের নিয়মে না হলেও আমরা সামাজিক দূরত্বটা কি ঠিকঠাক মেনে চলছি ? সব মিলিয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়েছি। করোনা প্রতিরোধে করণীয় কী তা জেনেছি। শুধু তার বাস্তব প্রয়োগটা নেই। ঝুঁকিটা এইখানে।

আরও পড়ুনঃ  চবিতে যৌন নিপীড়নে দুই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল

করোনার ভয় ও বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী শাহীদুল ইসলাম আপন। তিনি বলেন, ‘ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এখন ভয়াবহ আতঙ্কের অন্য নাম। বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা করোনা আতঙ্কে ক্লাস, ক্যাম্পাস ত্যাগ করছে। বাংলাদেশ খুবই ছোট একটি দেশ। এর মধ্যে ঢাকার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অবস্থান। প্রতিটি শিক্ষার্থীই তীব্র ভয়ের মধ্যে আছে । কেননা একবার আক্রমণ করে ফেললে হয়তো তা একটি শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারেও বিপর্যয় নামিয়ে নিয়ে আসতে পারে।’

সাভারের অদূরে অবস্থিত গ্রাম শহরের মিশ্রণে প্রতিষ্ঠিত দেশের ভিন্নধর্মী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় । উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আফতাব বিন্তু বলেন, করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে চীনসহ অনেক দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে যা আমাদের জন্য খবুই বিপদজনক। এই ভাইরাস এর কোনো টীকা আবিষ্কারও হয়নি। এমতাবস্থায় আমাদের এই ভাইরাস থেকে নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যেমন বাহিরে মাস্ক পরে বের হতে হবে,নিজেকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা । অন্যান্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিরাজ করছে করোনা ভয় । তাই সকলের উচিত শুধু ভয় নয় বরং এর থেকে বাচার জন্য এখন থেকেই আরও বেশি সচেতনতা তৈরি করা । ‘

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল আহমেদ জানান, ‘বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমের মূখ্যআলোচ্য বিষয় একটাই করোনাভাইরাস। যানা যায় পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। ইউরোপ,আমেরিকা,চীনের মতো দেশ গুলো ভাইরাসের মোকাবেলায় রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। তাই করোনার ভয় সবার মনেই কম বেশি কাজ করছে । তবে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যার যার জায়গা থেকে সচেতন থাকতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  করোনা পরবর্তী শিক্ষা সংকট নিরসনে জবি ছাত্র ইউনিয়নের পাঁচ দফা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর রায়হান বলেন, ‘ সবচেয়ে ভয়ের কথা হলো আমাদের প্রিয় দেশটিও আজ করোনা থেকে মুক্ত নয়। দেশের সরকারি পর্যায় থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে নিরাপদ থাকার জন্য বারবার বলা হচ্ছে, জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারপরও বলতে হয়, আমরা কি সচেতন হতে পেরেছি ?

সময়ের পালাবদলে নতুন নতুন সমস্যা যেন বেড়েই চলেছে। এমনই এক সমস্যা করোনা ভাইরাস । যা চাইলেও সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ তালুকদার জানায় , ‘ নোয়াখালীতে করোনা নিয়ে খুব বেশি আতঙ্ক আমি দেখিনি । এখানে প্রায় ২০ ভাগের মতো মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন । তবে ভয় একটা রয়েই গেছে সেটা হলো নোয়াখালীর অনেকেই ইতালিতে থাকে , তাই কখন কার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে সেই ভয় রয়েই যায় । ‘

এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা প্রতিনিয়ত করোনার ভয়ে ভীত । কিন্তু এই ভাইরাস যদি দ্রুত ছড়িয়ে যায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে তখন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ কি আর শিক্ষার্থীদেরই বা ভবিষ্যৎ কি তা সত্তিই ভাবার বিষয়। মৃত্যুর আহাজারি নয় বরং সুন্দর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন যেন সবাই এটিই এখন লেখক ও দেশের সকল শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ।

আনন্দবাজার/রনি/আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন