জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটুক্তির দায়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রীর কর্মী ও আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৬-১৭ স্নাতক (সম্মান) শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আশিকুল ইসলাম পাটুয়ারী। তার রোল নং ১৬১১০২১।
বুধবার (৮ মার্চ) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
‘বঙ্গবন্ধুকে ফেরেশতারূপে হাজির করা হইতেছে ও বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার নিয়ে হৈহৈ অধিকাংশই ব্যবসা’ এমন মন্তব্য বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাকর ও এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে ও কেন তাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ৭ কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পেশ করার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. পারেশ চন্দ্র বর্ম্মনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন। আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেহেনা পারভিন ও পরিসংখ্যান বিভাগের ড. সাজ্জাদ হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি আব্দুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পুর জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আশিকুল ইসলামকে শাখা ছাত্র মৈত্রীর কর্মী থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
আশিকুল ইসলাম পাটুয়ারী তার ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ফেরেশতারূপে হাজির করা হইতেছে সর্বত্র, ভালো। তো এখন আপনাদের কর্তব্য হইলো এই ফেরেশতার আদর্শ অনুসরণ করা। যেহেতু দাবী করেন, আপনারা ফেরেশতার আদর্শের দল, গঠনে গাঠনে। আদর্শ অনুসরণ মানে হইলো- ফেরেশতার দ্বারা দুর্নীতি, মিথ্যা দূরে থাক কোন পাপ কাজ হওয়াই সম্ভব না, আপনার মধ্যেও এগুলো ফুটে উঠা। অথচ, আপনি হইতেছেন তার পুরো উল্টো! আপনি দুনিয়ার বেবাক পাপ কাজগুলা কইরা ফেরেশতা দ্বারা পাপমুক্তি নিতেছেন। যেন খ্রিষ্টধর্মের ওই বিশ্বাস অনুযায়ী যে, যিশু নিজে মরে তার সকল অনুসারীদের পাপমুক্তির সত্যায়ন করে গেছেন।
তো, এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ফেরেশতার এই সিলটাই সকল দুর্নীতি, অন্যায়, জুলুমের আখড়ায় পরিগণিত হইতেছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল পুরো উল্টো।
তো এখন যতই বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার নিয়ে হৈহৈ দেখতেছেন, তার অধিকাংশই ব্যবসা, নিজের চলতি বা ভবিতব্য পাপকাজগুলো বৈধ করার প্রচেষ্টা।’
এ পোস্ট ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা কর্মীরা এর নিন্দা ও বহিষ্কারের দাবি জানায়।
পরে আবার আশিকুর ইসলাম পাটুয়ারী ফেসবুক পোস্ট করেন, ভাই, আপনারা কেন ভুল বুঝছেন? আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ফেরেশতা বুঝাইনি। যারা বঙ্গবন্ধুকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন, ফেরেশতাস্বরূপ উপস্থাপন করছেন, আমি তাদের কথা বলতে চেয়েছি।
আমার কাছে বঙ্গবন্ধু মানে, স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু, নিখাদ, নিরেট ভালোবাসার বঙ্গবন্ধু। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিজেই নিজের পরিপূরক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা এই দু’জন আমার কাছে আপন, একান্তই আপন।
এছাড়াও বলেন, আমার পোস্টের অল্প অংশ নিয়ে স্ক্রিনশট মেরে আমাকে ভুল বুঝবেন না। পুরো পোস্টটি দেখুন।
আরেক পোস্টে তিনি দাবি করেন যে তার ফেসবুক আইডি মোট পাঁচবার হ্যাকড হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারীকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
আশিকুল ইসলাম পাটোয়ারীকে মুঠোফোনে বলেন, আমার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছিল। এ পোস্টের বিষয়ে আমি জানিনা।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর খুনির বিচারকে পুরাতন কাসন্দি মন্তব্য করায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স এর ছাত্রী তানজিদা সুলতানা ছন্দকে গতকাল ৭ এপ্রিল বহিষ্কার করা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ৭ কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
আনন্দবাজার/শাহী