ঢাকা | মঙ্গলবার
৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুজিব জন্ম শতর্বষে গবিতে পিঠা উৎসব

 

শীত পল্লবে পিঠা খেতে এসে খুশিতে ভীষম খেয়ে 
উল্লাস আরও বেরেছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।

শীতকাল আর পিঠার সাথে যেন গভীর এক প্রেম। গ্রীষ্মকাল যদিও পিঠার সাথে পরকীয়া করতে চায় কিন্তু শীতকালের কুয়াশা মাখানো রূপ রসের কাছে তা বার বারই পরাজিত হয়। শীতকাল অথচ পিঠা খাওয়া হবে না তা কি কখনও হয়? গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য বিভিন্ন পিঠা ও পিঠা উৎসব। মায়ের বকুনি বা শাসন সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও অনেকেই চুরি করে পিঠা খেতে একদমই ভুল করেন না।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় জমকালো এক পিঠা উৎসব। উক্ত উৎসবে মোট ২৪ টি স্টল সাজানো হয় বাংলার রুপ রস আর সংস্কৃতির মিশ্রনে। শহরের কোলাহল আর ইট বালুর মিশ্রনে যখন মানব মনে মরিচা ধরে তখন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার ভুবনে শিস কাগজের ভূমিকায় মনের সব মরিচা তুলে দেন এমন পিঠা উৎসব। শুধুমাত্র তাই নয় এমন উৎসবে যদি থাকে ঘুড়ি উড়ানো, মোরগের লড়াইয়ের মতো গ্রাম বাংলার মজার সব খেলা ও লালনগিতী আর পল্লীগিতীসহ বিভিন্ন গান ও কোমর দোলানো নাচ তাহলে কে মিস করতে চাইবে এমন সুযোগ ? এ যেনো একের ভিতরে সব প্যাকেজ!

সম্প্রতি এমনই এক মন ভোলানো প্যাকেজ উপভোগ করলো গবিয়ান ও দূর দূরান্ত থেকে আগত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) কর্তৃক আয়োজিত এই পিঠা উৎসবে পদচারণা করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ এমপি।

অনুষ্ঠানের সূচনাকালে বেনজির আহমেদ বলেন, তরুণরাই পারে দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে। তাই তরুনদের উচিত দেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং দেশের কল্যাণে অবদান রাখা। মুজিব জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত পিঠা উৎসবের আয়োজন অনেক চমৎকার হয়েছে।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য আজ যেনো শহরের ধুলাবালিতে চাপা পড়ার মতোই উপক্রম হয়েছে। সেই আবহমান বাংলার চিত্র এখন আর খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধারন করে আয়োজিত পিঠা উৎসবের মূল কারিগর গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ এর সহ সভাপতি (ভিপি) জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নজরুল ইসলাম বলেন, মুজিব জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত পিঠা উৎসব আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি যাতে তারা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে বুকে লালন করতে পারেন এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

ইতোপূর্বে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস) এর উদ্দ্যোগে পিঠা উৎসবের প্রথম আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এই বছরও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে এবং আমরা এটি আরও দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে চায়। প্রতি বছরই এই উৎসবের মাধ্যমে যাতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও কালচার যেন শিক্ষার্থীদের মাঝে ফুটে উঠতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম মুজিব জন্ম শতবর্ষ পিঠা উৎসবের মাধ্যমে পালন করছি ।

পিঠা উৎসবে রঞ্জিত চব্বিশটি স্টলের মধ্যে বিশেষভাবে সজ্জিত হয় গবিসাস স্টল, ডা. এড্রিক বেকারের রক্তিম পিঠা ঘর, আদিবাসিদের পিঠা ঘর, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের রঙ্গিন ঘুড়ি পিঠা মহল, ফার্মেসি বিভাগের বাহারী পিঠা ঘর, এবং সমকাল সহৃদ এর মামা বাড়ির পিঠা।

একেক স্টলের আয়োজকদের অনুভুতিও কিন্তু ছিল ভিন্ন ভিন্ন। তারা তাদের রুপ রস ও ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করেন তাদের এই স্টলের মাধ্যমে। ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশনের সভাপতি অরুপ সরকার জানান, আমাদের সংগঠনটি মূলত একটি সেবামূলক সংগঠন। আমাদের আয়োজিত এই স্টলটিতে মোট ২৮ ধরনের পিঠা রাখা হয়েছে। এবং সবগুলো পিঠাই বাড়িতে তৈরীকৃত। আমাদের এই পিঠা উৎসব থেকে যা লাভ আসবে তা আমরা মানবতার সেবায় ব্যায় করবো।

পিঠা উৎসবে মন মাতানো আয়োজন করে পিঠার স্বাদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গ্রাম বাংলার মজার সব পিঠায় সকলের নজর কারে রঙিন ঘুড়ি নামক তাদের স্টলটি।

পিঠা উৎসব নিয়ে তাদের এই আয়োজন সম্পর্কে উক্ত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহবুবা খাতুন বলেন, পিঠা উৎসব বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তরুণ প্রজন্মের আজ অনেকেই জানেন না গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হরেক রকমের পিঠার নাম।

এমনকি অনেকেই আছে যারা এই পিঠাগুলো আদৌ খাইনি। এই পিঠা উৎসবের মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত হওয়ার এবং স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সকল শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা অনেক পরিশ্রম করে পিঠা তৈরী করেছে এবং পিঠা উৎসবে বিভাগের সুনাম বয়ে এনেছে ।

পিঠা উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে আদিবাসীদের পিঠা ঘর। কারন এতে যে পিঠাগুলো আনা হয় তা অন্য কোনো স্টলেই ছিল না। ভিন্ন এ আয়োজন সম্পর্কে অনুভুতি প্রকাশ করেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেসাইনো মারমা । তিনি বলেন, আমাদের এই পিঠা ঘরে সব আদিবাসীদের যেমন : চাকমা, মারমা, ত্রিপুরার প্রায় সকল পিঠা রাখা হয়। এগুলো সবই বান্দরবান থেকে আনা। আমাদের এই স্টল দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য আমাদের এই আনকমন পিঠাগুলির সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। ছাত্র সংসদ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারন এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা আমাদের কালচারকে ফুটিয়ে তুলার সুযোগ পেয়েছি ।

পিঠা উৎসবে ভিন্নধর্মী আয়োজন করেন গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। সব স্টলের শিক্ষার্থীরা যখন পিঠা বিক্রি করায় ব্যাস্ত তখন গবিসাস প্রদর্শন করেছে শুধু তাদের সদস্যদের লিখা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। যা দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ইইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মকালীন তথ্য থেকে বর্তমান তথ্য তুলে ধরেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে ।

গ্রাম বাংলার এমন ঐতিহ্যকে দীর্ঘদিন ধরে রাখতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা। তাদের কাছে এটি শুধু উৎসবই নয় বরং বাংলাকে নতুন করে জানার নতুন এক মাধ্যম। যেই মাধ্যমে জানতে কোনো বাইরের শক্তি বা তারের প্রয়োজন হয় না, শুধুমাত্র ইচ্ছে আর একটু বাংলার প্রতি ভালোবাসার দরকার হয়। আর এমন ভালোবাসা সবার মনে আছে বলেই লেখকের বিশ্বাস।

আনন্দবাজার/এস.কে

 

সংবাদটি শেয়ার করুন