কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ও ৩১ নং ধারায় এই মামলাটি (মামলা নং ৩১) দায়ের করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মরণে একুশের প্রথম প্রহরের আগে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আয়োজিত হয়। যেখানে ‘কবর’ নাটকটি পরিবেশন করে বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার। সময় স্বল্পতার কারণে প্রথম প্রহরের আগে কিছু সময় পর নাটকটি মাঝপথে বন্ধ করে দেন দিবসটির আয়োজক কমিটি।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরবর্তীতে থিয়েটারের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ একটি স্ট্যাটাস দেন। এমন কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চান অভিযুক্ত মেহেদী। পাশাপাশি এই ঘটনায় গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক নিয়ে অশালীন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশাসন কর্তৃক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় মর্মাহত, লজ্জিত। আমরা এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে অবহিত করেছি এবং বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কোনো শৈথিল্য দেখা যায় তবে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনের দিকে যাবো।’
এদিকে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির কাছে মেহেদী হাসানের শাস্তি শিথিল ও যথাসম্ভব লঘু করার আবেদন জানান থিয়েটারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এমন কাণ্ডে তারা বিব্রত বোধ করছেন জানিয়ে মানবিক দিক বিবেচনায় অভিযুক্তের হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তাদের দাবি, ক্ষমা চাওয়ার পরেও প্রশাসন বড় শাস্তি দিচ্ছে।
মামলার বিষয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, ‘আমরা অভিযোগটি পেয়েছি, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে এই মামলা করা হয়েছে। তার সনদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল, তার সনদ কেন স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবেনা এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে’
আনন্দবাজার/শা.ই/শহক