ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাবিতে ১৪ হাজার ছাত্রীর জন্য ২৫টি শৌচাগার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন ভবনে প্রায় নিয়মিতই ক্লাস-পরীক্ষা থাকে। কোনো কোনো বিভাগে সকাল থেকে একটানা বিকেল পর্যন্ত ক্লাস থাকে। একডেমিক এ ভবনগুলোতে প্রায় ১৪ হাজার ছাত্রী ক্লাস করলেও তাদের ব্যবহারের জন্য মাত্র ২৫টি শৌচাগার রয়েছে। পর্যাপ্ত শৌচাগারের করণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এসব ছাত্রীদের ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৪ হাজার ছাত্রীর (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত) জন্য একাডেমিক ভবনে শৌচাগার আছে রয়েছে মাত্র ২৫টি। এ হিসেবে প্রতি ৫৬০ জন ছাত্রীর জন্য শৌচাগারের মাত্র ১টি। আবার এসব শৌচাগার কেবল অফিস চলাকালীন সময়ে খোলা থাকে। অন্য সময় ছাত্রদের শৌচাগার ব্যবহার করা ছাড়া ছাত্রীদের কোন উপায় থাকে না। ফলে অপর্যাপ্ত শৌচাগারের কারণে ছাত্রীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের কলা অনুষদের ১২ টি বিভাগের প্রায় দুই হাজার ছাত্রী প্রতিদিন ক্লাস করছেন। এসব ছাত্রীর জন্য চার তলা ভবনের তৃতীয় তলায় একটি কমনরুমে মাত্র ২টি শৌচাগার রয়েছে। ছাত্রীরা যে তলায়ই ক্লাস করুন না কেন, শৌচাগারে যাওয়ার জন্য তাদের দ্বিতীয় তলায়ই দৌঁড়াতে হয়। এই ভবনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একাডেমিক ভবনগুলোতেও ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অভিযোগ, একদিকে অপর্যাপ্ত শৌচাগার, অন্যদিকে সেগুলোর নোংরা পরিবেশের কারণে তারা হর হামেশাই সমস্যায় পড়ছেন। জরাজীর্ণ অবস্থা, ময়লা-দূগর্ন্ধ, নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই। শৌচাগার ঠিকমতো পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধ কমনরুমেও ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নারীদের জরুরী মুহূর্তগুলোতে মারাত্মক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি একাডেমিক ভবন ঘুরে দেখা যায়, মমতাজ উদ্দীন একাডেমিক ভবনে শৌচাগার রয়েছে ২টি, শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনে ২টি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে ৪টি, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনে ২টি, সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনে ২টি, ড. কুদরত-এ-খুদা একডেমিক ভবনে ২টি, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে ৫টি, ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনে ২টি, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন একাডেমিক ভবনে ২টি এবং আইবিএ ভবনে ২টি শৌচাগার রয়েছে। কৃষি অনুষদ ভবনে ছাত্রীদের জন্য কোন আলাদা শৌচাগার নেই। এছাড়া ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের বর্ধিতাংশে একটি কমনরুম নির্মাণাধীন রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রীদের অধিকাংশ শৌচাগারের বেহাল দশা। কমোডগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেগুলো নোংরা লালচে রং ধারণ করেছে। কিছু শৌচাগারের দরজার সিটকিনি নষ্ট ও বেসিন ভাঙ্গা। পানি জমে মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে এসব শৌচাগার এখন সংক্রামক রোগ-জীবাণুর উৎসে পরিণত হয়েছে। কমনরুমে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং স্যাঁতসেঁতে অবস্থা বিরাজ করছে। কমনরুমে ছাত্রীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত আসবাবপত্র নেই। আবার কয়েকটি কমনরুমের আসবাবপত্র ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
কৃষি অনুষদ ভবনে ক্লাস করেন ফিশারীজ বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, কৃষি অনুষদ ভবনে আমাদের জন্য কোন আলাদা শৌচাগার বা কমনরুম নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের একসাথে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মিম্মা রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস চলাকালীন সময় ছাড়া কমনরুম বন্ধ থাকে। তখন ছাত্রদের শৌচাগার ব্যবহার করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না বলে অনেক ছাত্রী শৌচাগারে যেতে চান না। বিশেষ করে জরুরী মুহূর্তগুলোকে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। কমনরুমে যে শৌচাগারগুলো রয়েছে সেগুলো ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার করা হয় না। প্রতিদিন অন্তত: একবার পরিষ্কার করলে শৌচাগারগুলো ব্যবহার উপযোগী হত।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, একাডেমিক ভবনগুলো অনেক পুরাতন। আগের ছাত্রীদের অনুপাতে সেগুলোতে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছিলো। এখন ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কয়েকটি ভবনের বর্ধিতাংশে ছাত্রীদের জন্য কমনরুম নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া ছাত্রদের শৌচাগারগুলোর মধ্যে কয়েকটি ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত করে দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।

জানতে চাইলে ছাত্র উপদেষ্ঠা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনায় ছাত্রীদের জন্য প্রতিটি ভবনে শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে শৌচাগারের সমস্যা আর থাকবে না। শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করার জন্য স্টুয়ার্ড দফতরে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড শাখায় জনবল সংকট আছে বলে জানান স্টুয়ার্ড শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোসলেম উদ্দীন। তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকট থাকায় শৌচাগারগুলো প্রতিদিন পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। এজন্য কয়েকদিন পরপর সেগুলো পরিষ্কার করা হয়।

আনন্দবাজার/এফআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন