ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক লাঞ্ছনার তিন বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত ! 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম.এম. শরীফুল করিম কর্তৃক শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি তদন্ত। তদন্ত কমিটির প্রধান কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষে হওয়ার ফলে থমকে আছে তদন্ত। ঘটনার এতদিন পেরিয়ে গেলেও বিচার না পেয়ে হতাশ ভুক্তভোগী শিক্ষক। বিচার দাবিতে শিক্ষক সমিতি বরাবর  লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী শিক্ষক ইংরেজি বিভাগের পূর্বনির্ধারিত  সান্ধ্যকালীন কোর্সের (ইভিনিং ইন মার্স্টাস-ইএমএ) প্রশ্ন মডারেশনের জন্য বিভাগে উপস্থিত হন। এ প্রোগ্রামের ডিরেক্টর (পিডি) এবং ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ হারুন প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী  প্রোগ্রাম ডিরেক্টরের কক্ষে (নিজ কক্ষে) প্রশ্ন মডারেশনের সভা আহবান করেন। কিন্তু মডারেশনের সদস্য এম.এম. শরীফুল করীম প্রোগ্রাম পরিচালকের কক্ষে মডারেশনের সভার অংশ গ্রহনে অস্বীকৃতি জানান। তার কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে দাবি করেন। অপর সদস্য নাদিয়া সারোয়ার প্রশ্ন মডারেশনের গুরুত্ত্ব এবং গোপনীয়তার স্বার্থে তাকে প্রোগ্রাম ডিরেক্টরের কক্ষে যেতে অনুরোধ করেন। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষক মোঃ অবুল হায়াত প্রোগ্রাম ডিরেক্টরের কক্ষে সভায় অংশ নিতে এম এম শরীফুল করিমকে অনুরোধ করলে তিনি রেগে বলেন, ‘তুমি বলার কে? আমার কক্ষেই সভা হবে।’  আবুল হায়াত নিয়মের কথা বললে শরীফুল করীম ক্ষিপ্ত হয়ে দ্রুত গতিতে নিজ চেয়ার থেকে উঠে ‘তুমি চেন, আমি কে? ফাজিল, বদমাশ, বেয়াদব, শালা’ বলে অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে তেড়ে আসেন। ইংরেজি বিভাগে হাজার বছর ধরে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করবো এবং আমি যা ইচ্ছা তাই করবো বলে জনাব করীম দাম্ভিকতা দেখান। এক পর্যায়ে তিনি গালিগালাজ করতে করতে জনাব হায়াতকে শারীরিকভাবে মারতে উদ্যত হন।
এঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কুন্ডু গোপীদাসকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধান পদ থেকে অব্যহতি প্রদান করা হয়। কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম থমকে যায়। ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। এতদিনেও ঘটনার বিচার না পেয়ে গত সোমবার শিক্ষক সমিতি বরাবর বিচারের দাবিতে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। অভিযোগপত্রে ঘটনাটি উল্লেখ করে এমন অশিক্ষকসূলভ আচরেন দায়ে যুক্ত শিক্ষককে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
এর আগে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষককে শারীরিক আঘাত ও মারধরের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দুই বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়। ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। বরং অভিযুক্ত শিক্ষককে দুইটি শর্ত দিয়ে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া বর্তমানে তাকে কলাও মানবিক অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
ভুক্তভোগী ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল হায়াত জানান, তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় কেউ পদে থাকলে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর এখানে পুরস্কৃত করা হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক। এর আগে তদন্ত চলাকালীন সময়ে তাকে বিভাগীয় প্রধান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
তদন্ত কমিটির তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, তদন্ত এতদিন বন্ধ থাকা ভালো হয়নি। ঘটনাটি সাবেক উপাচার্যের সময়ের বলে এতদিন নিষ্পত্তি হয়নি। উপাচার্যের নির্দেশে আবার নতুন করর তদন্ত কমিটি হবে এবং শীঘ্রই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। অভিযুক্ত শিক্ষককে তদন্ত চলাকালীন সময়ে ডিন পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এবিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্য মহোদয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন