চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনতলা বিশিষ্ট বিএনসিসি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে পরামর্শক সেবা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। স্বাধীন জুরি প্যানেলের মাধ্যমে কারিগরি এবং আর্থিক উভয় ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থানে থাকার পরেও দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, যা সম্পূর্ণরূপে নিয়ম ও বিধির লঙ্ঘণ বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৮ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত আর্থিক প্রস্তাব খোলার সভায় ইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে (আইইডি) সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ও সর্বনিম্ন অর্থনৈতিক প্রস্তাবদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা আরএফপি সেকশন ০১, আইটিিস ক্লজ ৩৯.১ অনুযায়ী সর্বোচ্চ সম্মিলিত স্কোরধারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং প্রথম স্থান অধিকার করে।
কিন্তু পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৫৯(৩)(ক), ৬০(২) এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ১২১(৩), ১২২ অনুযায়ী সুস্পষ্ট নিয়ম থাকা সত্ত্বেও, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রথম স্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই দ্বিতীয় স্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যারা সম্মিলিত স্কোরে ১০.১৫ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিধি অনুযায়ী প্রথম স্থান অধিকার করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা (নেগোসিয়েশন) করতে হবে। যদি প্রথম প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবে অসম্মত হয় বা অপারগতা প্রকাশ করে তখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জানিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার কিছুই করা হয়নি। প্রথম স্থান অধিকার করা প্রতিষ্ঠান আইইডি কে না জানিয়েই সরাসরি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে কাজ প্রদান করা হয়েছে, যা সুস্পষ্ট নিয়মের লঙ্ঘন এবং অসৎ উদ্দেশ্য প্রণদিত। আইইডি’র পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে অভিযোগ প্রদান করা হলেও কোনো উত্তর তারা পাননি।
এ বিষয়ে ইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবস্থাপক এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিত্বকারী মো. মনতাসির আহমেদ বলেন, নিয়ম অনুসরণ না করে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা শুরু করায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এটি স্বচ্ছতা ও ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিপন্থী এবং সম্পূর্ণ অনিয়ম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রৌকশল কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মিথ্যা। ওনারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং আমাদের বাজেটের মধ্যে কাজ করার অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে, আমাদের ভুল হয়েছে যে তাদের কাছ থেকে এ বিষয়টি লিখিত নেওয়া হয়নি। আমি তাদের অভিযোগের চিঠি পেয়েছি, সেটার উত্তর দেবো।
এ বিষয়ে রইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী রানা মাসুদ জানান, পিপিআর এর নিয়ম অনুযায়ী একই সাথে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে নেগোসিয়েশনের জন্য আহ্বান করার সুযোগ নেই। আলোচনায় প্রথম স্থান অধিকার করা প্রতিষ্ঠানের অপারগতা প্রকাশ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করার পর দ্বিতীয় পক্ষকে আহ্বান করতে পারবেন। প্রস্তাবিত বাজেট যদি নির্ধারিত বাজেটের বেশি হয় তখন নেগোসিয়েশন সভায় প্রথম প্রতিষ্ঠানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তা উন্মোচন করতে হবে। আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কারিগরি ও আর্থিক নেগোসিয়েশন অসম্পূর্ণ রেখে বাজেট সম্পর্কে অবহিত না করেই তাকে তড়িঘড়িকে স্থান ত্যাগ করতে বলা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটিই পিপিআর এর নিয়ম লঙ্ঘন করে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এটির পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আমাদের মনে হয়। এই প্রেক্ষাপটে, আমরা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে চুক্তি আলোচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি ।