ঢাকা | সোমবার
৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৪শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৭তম সহকারী জজ পরীক্ষায় জাবির তিন শিক্ষার্থীর সাফল্য

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) ১৭তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের তিন শিক্ষার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, আইন ও বিচার বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের আমিন সরকার (৮০তম), ৪৬তম ব্যাচের জয়বুন্নাহার নয়ন (৩৮তম), ৪৫ তম ব্যাচের মো. জাকারিয়া (৯১তম)। রবিবারবার (২৩ ফেব্রুয়ারি ) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (জেলা ও দায়রা জজ) শরীফ এ এম রেজা জাকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের প্রবেশ পদে (সহকারী জজ) নিয়োগের উদ্দেশ্যে গৃহীত ১৭শ বিজেএস পরীক্ষা, ২০২৪ এ সাময়িকভাবে (Provisionally) উত্তীর্ণ ও মনোনীত ১০২ (একশত দুই) জন প্রার্থীর রোল নম্বরসমূহ মেধাক্রম অনুসারে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য প্রকাশ করা হলো। উল্লেখ্য, ১০০ তম থেকে ১০২তম মেধা অধিকারী প্রার্থী একই নম্বর প্রাপ্ত হওয়ায় নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ১০০ জন প্রার্থীর সাথে অতিরিক্ত ০২ জন প্রার্থীসহ মোট ১০২ জন প্রার্থীকে মনোনীত করা হলো।

আইন ও বিচার বিভাগ সভাপতি অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম বলেন, অপেক্ষাকৃত নবীন বিভাগ হওয়ায় আমাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পর্যাপ্ত ক্লাস রুম নেই, যথেষ্ট শিক্ষক নেই শিক্ষার্থীদের আমরা যথেষ্ট সাপোর্ট দিতে পারছি না তারপরেও এবছর আমাদের ৩ জন সহকারী জজ হয়েছেন,সফল হয়েছে, এটা খুবই প্রাপ্তির বিষয়। বিভাগের চেয়ারম্যান এবং শিক্ষক সবাই খুবই আনন্দিত। আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে আমরা অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই। তারা ন্যায়ের পক্ষে কাজ করবে সেই প্রত্যাশা রাখছি৷ আশাকরি সামনের দিনগুলোতে এসংখ্যা আরো অনেক বেশি বাড়বে।

সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত জীবন নাহার বলেন, এই সাফল্যের জন্য আমি সর্বপ্রথম সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মেধাতালিকায় নিজের নাম দেখে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি আমার বন্ধুদের দিয়ে কয়েকবার তালিকা যাচাই করিয়েছি। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর যে আনন্দ অনুভব করেছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মূলত, একাডেমিক পড়াশোনাই আমার প্রস্তুতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই প্রতিটি বিষয়ের আলাদা নোট তৈরি করে গুছিয়ে পড়েছি, যা বিজেএস পরীক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার কারণে গণিত ও বিজ্ঞানের ওপর একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে ওঠে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করানোর অভিজ্ঞতা তাকে সাধারণ বিষয়গুলোর প্রস্তুতিতে আলাদা চাপ নিতে হয়নি।

ভবিষ্যতে যারা বিচার বিভাগীয় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের প্রতি জীবন নাহারের পরামর্শ— একাডেমিক পড়াশোনাকে গুরুত্ব দিতে হবে ১ম ও ২য় বর্ষে পুরোপুরি একাডেমি ফোকাসড হওয়া দরকার। অনেকেই শুরুতেই একাডেমিক পড়াশুনা না করে চাকরির পড়াশুনা করে যা মোটেও উচিত না আমি মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ থেকে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি জন্য পড়াশুনা শুরু কর যেতে । বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়, যা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

আল আমিন সরকার বলেন, জীবনের প্রথম পরীক্ষাতেই সফল হওয়ার অনুভূতি আসলে শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না। আল্লাহর অশেষ দয়ায় নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছি। এই যাত্রায় আব্বু-আম্মু, ছোট ভাই, সিনিয়র-জুনিয়র সহ যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছে- সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিজেএসের জন্য পড়া শুরু করি থার্ড ইয়ার ফাইনাল শেষ করেই। ফোর্থ ইয়ারে ওই ইয়ারের কোর্সগুলোর সাথে ফার্স্ট ইয়ার থেকে যেসব বিষয় বিজেএস সিলেবাসে আছে, সবগুলো শেষ করা হয়। পাশাপাশি জেনারেল বিষয়গুলোও গুছিয়ে ফেলি। এ বছরেই মোটামুটি সিলেবাস কভার হয়ে যায়। মাস্টার্স চলাকালীন রিভিশনের সাথে লিখিত ভিত্তিক প্রস্তুতি নিই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বিজেএসে ভালো করতে আইন এবং জেনারেল- দুই অংশের মধ্যে ব্যালেন্স করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আইনে বা শুধু জেনারেলে ভালো করেও অনেকে জাজ হয়েছে। কিন্তু, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে দুইটার মধ্যে ব্যালেন্স রাখতে পারলে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি।

মো: জাকারিয়া বলেন, নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ, যিনি আমাকে এ বিশাল সাফল্য উপহার দিয়েছেন। বিচার বিভাগে কাজ করা ছিল আমার স্বপ্ন, আর আজ আমি সেই স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছি। এর আগে আমি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। তবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় চাকরির পাশাপাশি নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। আমার কঠিন সময়ে পরিবারের সবাই পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। বিশেষ করে আমার সহধর্মিণী সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি বারবার বলতেন— ‘তুমি একদিন সফল হবেই, ইনশাআল্লাহ। চেষ্টা করে যাও, আমরা তোমার পাশে আছি।’ এটি আমার জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা ছিল। নতুন যারা জুডিশিয়ারিতে আসতে চায়, তাদের নিয়মিত অধ্যয়ন করতে হবে। একাডেমিক পড়াশোনাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ একাডেমিক পড়াশুনা ভিত্তি গড়ে দেয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন