চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে রোববার (৩০ জুন)। এদিন ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন দেশের ৬০ জেলায় একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শুধু সিলেট বিভাগের চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে ৮ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। এসব জেলায় ৯ জুলাই থেকে প্রকাশিত সময়সূচি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী—প্রথমদিনে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় কোরআন মাজিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসির (বিএম/বিএমটি) বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সিলেট অঞ্চলের চারটি জেলার এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ৯ জুলাই থেকে এসব জেলায় পূর্বঘোষিত সময়সূচি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর সময়সূচি পরে প্রকাশ করবে স্ব স্ব বোর্ড।
জানা গেছে, চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল), ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৫০ হাজার ২৮১ এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৫০৯ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৯১ লাখ ৪৪৮ জন। এবার সারাদেশে মোট কেন্দ্র দুই হাজার ৭২৫টি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯ হাজার ৪৬৩টি। গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২৯৪টি ও কেন্দ্র বেড়েছে ৬৭টি। এছাড়া বিদেশের আটটি কেন্দ্রে মোট ২৮১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এদিকে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ সালের পুনর্বিনাস করা পাঠ্যসূচি (সিলেবাস) অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চারটি জেলায় পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, বাকি ৬০ জেলায় সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আশা করি, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর একটি চক্র প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে থাকে। ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকবে। পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তারপরও কেউ এ ধরনের গুজব ছড়ালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয় হবে।
এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রতি বছরের মতো এবারও কিছু নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। সেগুলো হলো—
- পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করতে হবে। কোনো কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে এর পরে প্রবেশ করতে দিলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণ রেজিস্ট্রারে লিখে ওইদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।
- পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন। প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না।
- পরীক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন আনতে পারবেন না।
- পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিকস ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
- পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (যেমন-পরীক্ষার্থী, কক্ষ প্রত্যবেক্ষক (ইনভিজিলেটর), মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্র পরিদর্শন টিম, বোর্ডের কেন্দ্র পরিদর্শন টিম, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পরিদর্শন টিম, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য) ছাড়া অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে প্রবেশ নিষেধ: এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। তারা শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও জনসাধারণকে নানান ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করার প্রয়োজনে পুলিশের ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ৩০ জুন থেকে পরীক্ষা চলাকালীন সময় পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে। শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন নয়, যেসব জেলা ও বিভাগীয় শহরে রোববার থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, তার সব জায়গায় পুলিশের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে বন্ধ কোচিং সেন্টার: প্রশ্নফাঁস ও নকলমুক্ত এইচএসসি পরীক্ষা নিশ্চিত করতে শনিবার (২৯ জুন) থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৪ দিন দেশের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হবে। তবে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি কেন্দ্রিক কোচিং সেন্টারগুলো খোলা রাখা যাবে। গত ৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা উপলক্ষে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ওইদিন ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো থেকেই মূলত প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে থাকে। এজন্য পরীক্ষার সময়ে কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। কেউ যদি নির্দেশনা না মানে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।