অজপাড়াগাঁয়ের মেয়ে সুমনা সুমি। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পড়েছেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তী কলেজে। এসএসসি এবং এইচএসসি তে পেয়েছেন জিপিএ ৫.০০ (সব বিষয়ে)। কিন্তু তার উচ্চ শিক্ষার পথ সহজ ছিলো না। সবাই চেয়েছিলেন স্থানীয় কোনো কলেজে স্নাতক পড়ানোর জন্য। কিন্তু আত্মপ্রত্যয়ী সুমী চাইছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে শিক্ষক হতে। মফস্বলের মেয়ের ঢাকায় থাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করাতে সবার সমর্থন ছিলো না। কিন্তু তার তাকে বাবা সাহস যোগালেন, অনুপ্রেরণা দিলেন। বাবার অনুপ্রেরণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন সুমনা সুমি। তারপর তাকে আর পিছনে তাকাতে হয় নি।
বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। আর সেই স্বপ্ন সফল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সুমনা আক্তার সুমি।
এ বছরের ৯ জানুয়ারি তিনি ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীন মার্কেটিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন। এর আগে তিনি ২০২০ সাল থেকে নিজ উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি ৪১তম বিসিএসের ভাইবা দিয়েছেন।
অনুভুতি প্রকাশ করে সুমনা সুমি বলেন, ‘বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল তার মেয়ে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে তিনি আমার এ সফলতা দেখতে পারেন নি। তিনি ২০২০ সালে মারা গেছেন ।’
সুমনা সুমির বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ ভাগ ইউনিয়নের কলাজুড়া গ্রামে। সেখানেই বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়ার শুরু। জিপিএ ৫.০০ পেয়ে ২০১০ সালে কলাজুড়া হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০১২ সালে বড়লেখা নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মাধ্যমিকের ফলাফলে তিনি সিলেট শিক্ষাবোর্ডে ১ম স্থান অর্জন করেন।
২০১৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরমার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন এবং ২০১৭ সালে সিজিপিএ ৩.৮২ পেয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ২০১৮ সালে ৩.৯০ পেয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
সফল হওয়ার পিছনে সুমনা সুমি শিক্ষকদের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। বিশেষ করে মাধ্যমিকে পড়াকালীন প্রধান শিক্ষক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার জন্য ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।