ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আখাউড়ায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে একই পরিবারের ৫ গৃহবধু

আখাউড়ায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে একই পরিবারের ৫ গৃহবধু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় শিক্ষা বিস্তারে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন একই পরিবারের ৫ জন গৃহবধু। শিক্ষকতা পেশার প্রতি বিরল ভালোবাসা থাকায় আদর্শ পেশাকে আকড়ে ধরে তারা এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। একই পরিবারে ৫ জন গৃহবধু শিক্ষক হওয়ায় তারা সর্বত্র প্রশংসায় ভাসছে । জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করায় তারাও মহাখুশি।

আদর্শ শিক্ষকরা হলেন সিদ্দিকা খাতুন, জীবন আক্তার, রোকসানা ইয়াসমিন, জান্নাতুল ফেরদৌস ও জেসমিন বেগম। তারা সবাই পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার সম্ভ্রান্ত খান বাড়ির মৃত জামশেদ খান মুহুরীর পুত্রবধু। জামশেদ খান মুহুরীর ৮ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। এরমধ্যে ৫ জন ছেলের বউ রয়েছেন শিক্ষক। সেইসাথে তার ছেলেরা সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মো: কামাল আহাম্মদ খানের স্ত্রী মোছা: সিদ্দিকা খাতুন ডিগ্রী (বিএ) পাস করার পর ১৯৮৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার লোগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে তিনি চাকুরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি পৌর শহরের দেবগ্রাম সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। মো: কাজল আহাম্মদ খান কায়েসের স্ত্রী জীবন আক্তার এসএসসি পাস করার পর ১৯৮৭ সালে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি পৌর শহরের দেবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই পদে কর্মরত আছেন। মো: সজল আহাম্মদ খানের স্ত্রী শিক্ষক রোকসানা ইয়াসমিন এম এ,এম এড করার পর ২০০০ সনে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট রাজার বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরি হয়।

বর্তমানে তিনি কসবা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি পরপর দুইবার জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায় কসবা উপজেলা থেকে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হন। তাছাড়া সরকারি ভাবে তিনি নিউজিল্যান্ড থেকে উচ্চ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেইসাথে বর্তমানে মাষ্টার ট্রেইনার হিসাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গভ: মডেল গার্লস হাইস্কুলে নিযুক্ত আছেন।

মো: বাদল আহাম্মদ খানের স্ত্রী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বিএসসি, বি এড পাস শেষে ১৯৯৯ সনে কসবা রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন। তিনি ২০১৭-১৯ সনে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। মো: জাবেদ আহাম্মদ খানের স্ত্রী শিক্ষক জেসমিন বেগম এমএ পাস করার পর ২০০৩ সনে উপজেলার মোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ওই ইউনিয়নের দরুইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন।

দেবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকা খাতুন বলেন, আমারা ৬ বোন। কোন ভাই নেই। বোনের মধ্যে আমি বসার বড়। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার প্রতি আমার প্রচন্ড শখ ছিল। সব সময় শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানে মুগ্ধ হতাম। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি শিক্ষক হওয়ায়। নিজেকে সেইভাগে গড়ে তুলে বাস্তবে হয়ে গেলাম। তাছাড়া সব সময় বাবা মা আদর্শ শিক্ষক ও আদর্শ মানুষ হওয়ার উৎসাহ ও প্রেরণা জুগিয়েছেন। সেই চেষ্টা থেকেই শিক্ষকতার পেশায় কর্মরত আছি। তিনি আরো বলেন একজন আদর্শ শিক্ষকই হলো সমাজ দেশ ও জাতি গঠনের কারিগর। আর আদর্শ শিক্ষকের মেধাশ্রমই জাতির অমূল্য সম্পদ গড়ে উঠে। আর আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনে আমি সেই চেষ্টা করছি। একই পরিবারে ৫ জন গৃহবধু শিক্ষক হওয়াতে আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না।

শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ছোট বেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। নিজ চেষ্টায় আল্লাহর রহমতে আমার আশা পুরণ হয়েছে। আমরা যা শিখেছি, তাই শিক্ষার্থীদের শেখানোর চেষ্টা করছি। শুধু বিদ্যালয়ে পাঠদানই নয় একজন আদর্শ মানুষের চরিত্র গঠনে যা দরকার তা শিক্ষার্থীদেরকে তা শেখানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ‘ঈদসহ বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও আমরা সবাই প্রতিনিয়ত সব কাজে সকলে বসে পরামর্শ করা হয়। নিজেদের মধ্যে পারিবারিক বিষয় সমস্যা-সম্ভাবনা এবং পাঠদান বিষয় নিয়েও নিজেরা আলোচনা করি। এক পরিবারে ৫ জন গৃহবধু শিক্ষক হওয়ায় সত্যি আমাদের কাছে ভালো লাগছে। আমাদের সবার একটাই কথা- আমরা শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক আদর্শ ও স্বপ্ন ছড়িতে দিতে চেষ্টা করছি এটাই আমাদের বড় পাওয়া।

মোগড়া ইউনিয়নের নয়াদিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, আমার ছোট বেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল। শিক্ষক হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এ সমাজে শিক্ষকদের তেমন মূল্যায়ন করা না হলেও আমি এ পেশায় থেকে কাজ করায় নিজেকে ধন্য মনে করছি।

পৌর শহরের দেবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: সেকের মিয়া বলেন, এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ একই পরিবারের ৩ জন শিক্ষক রয়েছে। বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা, পাঠদান, শিক্ষার্থীদেরকে ভালো আচরণ সত্যি প্রশংসার দাবি দার। আমরা তাদেরকে নিয়ে গর্ব করি।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: বাবুল মিয়া বলেন, দেবগ্রাম খানবাড়ির এই পরিবারটি হলো একটি সম্ভ্রান্ত পরিবার। এক পরিবারে ৫ জন গৃহিণী শিক্ষক হওয়া এটা আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। তাদের আচার আচরন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম সত্যি প্রশংসার দাবীদার। তারা আমাদের এলাকার গর্ব।

আখাউড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: লুৎফুর রহমান বলেন, একজন আদর্শ শিক্ষকই জাতির মেধা গড়ার কারিগর। এক পরিবারে ৫ জন গৃহবধু শিক্ষক রয়েছে সত্যি এটা খুবই আশ্চর্যের বিষয়। তারা আদর্শ শিক্ষদানে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াবে এটা আমরা আশাকরি। কারণ শিক্ষিতরা হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের মেধা আর শ্রমেই জাতির অমূল্য সম্পদ তৈরী হয়। তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আলোকিত শিক্ষকদের শিক্ষা দান ছড়িয়ে পড়ূক দেশের সর্বত্র।

সংবাদটি শেয়ার করুন