জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বর্তমান তদন্ত কমিটির পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিবাদ ও তিন দফা দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে অনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত শিক্ষককের বহিষ্কার, দায়মুক্তির ষড়যন্ত্রে প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরের সংশ্লিষ্টতার তদন্ত এবং শিক্ষক মুল্যায়ন পদ্ধতির দাবীতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও উপচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রেরণ করেছে।
রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা উক্ত শিক্ষককের বহিষ্কার, দায়মুক্তির ষড়যন্ত্রে প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরের সংশ্লিষ্টতার তদন্ত এবং শিক্ষক মুল্যায়নসহ তিন দফা দাবি নিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন । দাবিগুলো ১) সত্যতা যাচাই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নজির নিশ্চিত করতে হবে।২) দায়মুক্তিপত্রে’র ঘটনায় প্রসাশনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপযুক্ত তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে এবং ৩) শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ সাপেক্ষে এক মাসের মধ্যে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতির নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদকক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপাচার্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু তিনি এমন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন যার সদস্যদের সাথে জনির নিয়মিত উঠাবসার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কি করে বুঝবো এই কমিটি নিরপেক্ষ তদন্ত করবে? আমরা অবিলম্বে একটি সুষ্ঠ তদন্ত কমিটি চাই। তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষক নামক এই অপকর্মকারীকে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হোক।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী বলেন, এখনো কিছু মানুষ বেচে আছ যারা আজ জাহাঙ্গীরনগরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে। যে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার কথা, জ্ঞানের কথা বলার কথা সেখানে তারা আজ কাউকে শিক্ষক বানানোর জন্য মার্কস বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন, এই ওই প্রলোভন দেখান। এগুলোর মাধ্যমে তারা অশিক্ষকসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ করছেন। এধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে তারা তাদের অবস্থান নিচে নামাচ্ছেন। একজন শিক্ষক যার নামে ভ্রুণ হত্যার মতো একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধ রয়েছে সেখানে তদন্তের জন্য এমন এক কমিটি গঠন করা হয়েছে যেটি কোনো অভিযোগ খুজে পায়নি বলে আমাদের আই ওয়াশ করছে।’
ছাত্র ফ্রন্ট জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, ‘একজন অপরাধী শিক্ষককে বাঁচাতে এই প্রশাসন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। যার প্রমাণ আমরা সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখেছি। আমরা জানতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একজন সহকারি প্রক্টর মিলে ভুক্তভোগীকে এনে দায়মুক্তিপত্র লেখাতে জোর করেছেন। তারা মাহমুদুর রহমান জনিকে বাঁচাতে তাদের চেষ্টার কমতি রাখছেন না। এখন পর্যন্ত প্রক্টর স্যার তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্পষ্ট কোন বক্তব্য দেননি। তাহলে কি আমরা ধরে নিবো তিনি এই অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন!
এসময় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি ইমতিয়াজ অর্ণব ও সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায়, ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতমসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ- নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন, ওই ছাত্রীর পরীক্ষার পরীক্ষক হওয়া এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন তিনি। এছাড়া প্রভাব খাটিয়ে দায়মুক্তিপত্র লেখানোসহ একাডেমিক অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি মাহমুদুর রহমান জনির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম ব্যাচের ছাত্রী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা আনিকা বুশরা বৈচির সঙ্গে অফিসকক্ষে তোলা একটি সেলফি ফাঁস হলে এসব নানা কেলাংকারীর তথ্য বেরিয়ে আসে। ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দেওয়ালে সাঁটানো হয়। সেলফিটি পোস্টারিং হওয়ার পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা জায়গা থেকে অভিযোগ উঠে আসছে। এছাড়াও জনির সঙ্গে ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রীর ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপন এবং ‘অশালীন’ চ্যাটিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন জাবির শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আনন্দবাজার/কআ