ক্যাম্পাস শব্দটা প্রথমে জেনেছি বই ও পত্রিকার মাধ্যমে। বাস্তবে এর স্বাদ নেওয়াটা যে কতো আনন্দের তা ঐ বই বা পত্রিকার ক্যাম্পাস শব্দে কখনোই পাওয়া যায় না। আবার যারা দূর থেকে ক্যাম্পাসটা দেখেন তারাও মনে হয় বুঝবেন না ক্যাম্পাসে কতো খুনসুঁটি লুকিয়ে থাকে।
২০১৮ সালের জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহের কোনো একদিন ভর্তি হলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। সেই থেকে শুরু হলো আমার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পথচলার প্রায় পাঁচ বছরের জীবন।
প্রথম যেদিন ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলাম, সেদিন এক অদৃশ্য ভয় কাজ করেছিলো ভেতরে। সময়ের ব্যবধানে এখন ক্যাম্পাসকে প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছি। খুব মনে পড়ে সব কিছু। সিনিয়রদের সঙ্গে গল্প করা। বন্ধুরা মিলে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপ স্টাডি করা। এগুলো যদি সবই আনন্দ আর হাসি-গানে পার করা যায়, তাহলে তো কথাই নেই। তাই তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসেও সৃষ্টি হয়েছে জনপ্রিয় আড্ডার স্থান।
কর্মক্ষেত্র আর পরিবেশ অনুযায়ী এককজনের আড্ডা একেক জায়গায় হয়ে থাকে। কেউ বা অফিস পাড়ায়, কেউ বা চায়ের দোকানে, কেউ বা কলেজ বিশ্বদ্যিালয়ের ক্যাম্পাসে। কমবেশি সব বাঙালিই আড্ডা ভালোবাসেন। ছাত্রজীবনে আড্ডাটা একটু বেশি আনন্দের। আর সেই আড্ডা যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তা হলে তো কোনো কথাই নেই। রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সামাজিক কর্মকাণ্ড, প্রেম-ভালোবাসাসহ প্রায় সব কিছুরই চর্চা হয় এখানে।
আড্ডা-বন্ধুত্ব-গান-পড়াশোনা এই নিয়ে মেতে আছে রাজধানী পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসটি যেন বন্ধুত্ব, আড্ডা, শিল্প, সাহিত্য ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় ঘেরা। কখনও গানে গানে ছড়িয়ে পড়ে তারুণ্যের উন্মাদনা। কখনও ছোটখাটো খেলায় মেতে ওঠে তারুণ্য ভরা সবুজ প্রাণ। ক্লাসসহ নানা ব্যস্ত সময় গড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলে কিংবা ক্লাসের ফাঁকে ক্যাম্পাসে ফুটে উঠে এক দারুণ প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার্থীদের আড্ডা পরিণত হয় তারুণ্যের এক উচ্ছ্বাসি মিলনমেলায়।
ক্যাম্পাসে গুচ্ছ ভাস্কর্য চত্বর, কাঁঠালতলা, শহীদ মিনার, মুজিবমঞ্চ, বটতলা, ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় গেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও ছাত্রীহলের সামনে বিকেল হলেই দেখা যায় প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি। গল্প, গান, বই, ল্যাপটপ, অ্যাসাইনমেন্ট আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে টিএসসির চা, কফির কাপ হাতে আড্ডা, হাতে হাত রেখে বন্ধুত্বের পরম উষ্ণতায় মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে পড়া। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল বড় বড় ডিগ্রি অর্জন আর ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, মিড, থিসিস আর পরীক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকবে, এই ধারণা মানতে নারাজ তারুণ্যের মিছিল করা এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে আড্ডা, গান, বিতর্ক, নাচ, খেলা, সমসাময়িক বিষয়ের আলাপ-আলোচনা, মত ও যুক্তির মাতামাতি। বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে থাকবে সাংস্কৃতিক বলয়। এর সবই আছে এই ক্যাম্পাসে। আর এসবের জন্যই দিনকে দিন সবার নজর কাড়ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) পড়ন্ত বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম আমরা ৭ জন। শুরু হয় বড় ভাই সোহাগ রাসিফ ও আশিকুজ্জামান আশিক আর ছোট ভাই মিলন, তারেক, তানভীরদের সঙ্গে আড্ডা।
ক্যাম্পাসের মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলা এবং পুরো ক্যাম্পাসে দল বেঁধে ঘোরাঘুরি। ঘুরতে ঘুরতে ক্যাম্পাসের প্রাচীর নির্মাণ কাজ, পুকুরে মাছের আনাগোনা, বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় প্রাণীর দেখা, বিভিন্ন ধরনের ঔষধি এবং ফলজাত গাছ দেখা বিশেষ করে প্রাকৃতিক দূর্বাঘাসের সৌন্দর্য তো আমাদের সবার মন কেড়ে নিয়েছিল।
এদিকে আবার বর্ষার শেষে শরতের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গায় দেখা মিলেছে কাশফুলের। আর তাতে গা ভাসাচ্ছেন কিশোর-কিশোরীরা। আমরা যারা ঘুরতে গিয়েছিলাম তারাও গা ভাসাতে আর ভুল করিনি। দলগতভাবে ছবি তোলা ভিডিও করাও থেমে থাকেনি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ শেষে আবার পুরাতন ক্যাম্পাসে ফিরে এসে সবাই মিলে সন্ধ্যায় লক্ষ্মীবাজারে চায়ের আড্ডা। এরপরে মেসে যাওয়ার পথে দ্বিতীয় বারের জন্য আবার কবে যাওয়া যায় এই গল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকা। এসবের মধ্যে দিয়েই আমাদের দিনের সমাপ্তিটা অসাধারণ হয়েছিল। স্মৃতিময় হয়ে থাকবে আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে এই দিনটি।
লেখক: শিক্ষার্থী, চতুর্থবর্ষ, দর্শন বিভাগ, জবি
আনন্দবাজার/শহক